লেখক #পথপ্রদর্শক_মাননীয়_তপন_ঘোষ
১৯৬৩ সালে আমি গ্রাম থেকে কলকাতায় আসি । গ্রাম মানে মুর্শিদাবাদ জেলার দক্ষিণ প্রান্তের প্রায় শেষ গ্রাম । নাম দক্ষিণখন্ড । তারপরেই শুরু হয়ে যায় বর্ধমান জেলা । বােধ হয় বছর দুয়েক ছিলাম সীতারাম ঘােষ স্ট্রীটের ভাড়া বাড়িতে । ঐ বাড়িতে থেকেই ১৯৬৪ – র সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা দেখেছিলাম । গলির ভিতরে অবশ্য মুসলমানরা ঢােকেনি । কিন্তু তিনতলার ছাদ থেকে কলাবাগান বস্তিতে হিন্দুর বাড়ি পােড়ার আগুন দেখেছি । আর দেখেছি আমাদের বাড়ির ও আশপাশের বাড়ির ছাদে বড়দেরকে ইট পাথরের টুকরাে জমা করে রাখতে ও গরম জলের ব্যবস্থা করতে । যদি মুসলমানরা গলিতে ঢােকে তাহলে উপর থেকে ফেলা হবে । স্বাধীনতার পর সেটাই ছিল সারা দেশ জুড়ে বড় দাঙ্গা । কারণটা হয়তাে অনেকে জানেন । যারা জানেন না তাদের জন্য বলছি , কাশ্মীরের শ্রীনগরে হজরতবাল নামে একটি মসজিদ আছে । সেখানে নাকি হজরত মহম্মদের একগুচ্ছ চুল সযত্নে রক্ষিত আছে । তাই তার নাম হজরতবাল মসজিদ । ইসলামে নাকি প্রতীক পূজা নিষিদ্ধ । তাহলে মহম্মদের চুলকে নিয়ে এই আদিখ্যেতা কেন , সে প্রশ্ন করার মতাে সাহস হিন্দুরা অর্জন করতে পারেনি । অথচ খােদ সৌদি আরবে মহম্মদের এরকম কোন স্মৃতি চিহ্ন রাখা হয় নি । এমনকি স্বয়ং হজরত মহম্মদ যে মসজিদে অনেকবার নামাজ পড়েছেন সেই মসজিদটি পর্যন্ত রাস্তা চওড়া করতে ভেঙে ফেলা হয়েছে । কিছু মােল্লা মৌলবি এর বিরােধিতা করলে সৌদি আরবের রাজা তাদেরকে জোরালাে ধমক দিয়ে বলেছেন যে কারও স্মৃতি চিহ্নকে সংরক্ষণ করা প্রতীক পূজার সমান । যারা এটা করবে তারা প্রকৃত মুসলমান নয় । তখন বিরােধীরা ভয়ে চুপ করে গেছে ।
মহম্মদের কেশ সংরক্ষণ করার মতাে । ইসলামবিরােধী ঐ মসজিদ থেকে ১৯৬৪ সালে হঠাৎ ঘােষণা করা হল যে হজরত মহম্মদের পবিত্র চুল চুরি গিয়েছে । ব্যাস্ ! সারা দেশের মুসলমানরা । দাঙ্গা শুরু করে দিল । কোনাে যুক্তিতে এর ব্যাখ্যা করা যায় ? প্রথমত , তােমরা প্রতীক পূজার বিরােধী । তাই হজরত মহম্মদের ছবি পর্যন্ত কোথাও নেই । তাহলে হজরত মহম্মদের প্রতীক রাখবে কেন ? দ্বিতীয়ত , ওটা আছে মসজিদের ভিতর । মসজিদের দেখাশােনা কে করে ? হিন্দুরা তাে করে না ! তােমরা মুসলমানরাই মসজিদের দেখাশােনা কর । তাহলে সেখান থেকে কোন জিনিস হারিয়ে গেলে তার দায়িত্ব কার ? তােমাদেরই দায়িত্ব । তাহলে তােমরা হিন্দুদের উপর ঝাপালে কেন ? তৃতীয়ত , যদি কোন চুরি – চামারির ঘটনা ঘটে , যদি তােমাদের কোন দামী বা পবিত্র জিনিস চুরি হয়ে যায় , তােমরা যদি তা উদ্ধার করতে না পারাে , তাহলে সভ্য দেশে আইন । কী বলে ? ভারতের আইন কী বলে ? থানায় বা পুলিশে অভিযােগ জানাতে হবে । তারা তদন্ত করবে । অপরাধীকে ধরবে । হারানাে জিনিস উদ্ধার করবে । তােমরা সেটা না করে সােজা ঝাঁপিয়ে পড়লে হিন্দুদের উপর । তার মানে কী ? তার মানে হল এই যে , তােমরা দেশের আইন মানে না । মানতে চাওনা । আইন নিজের হাতে তুলে নিতে দ্বিধা করাে না । কিন্তু এই কথাটা তােমাদেরকে স্পষ্ট করে বলার সাহস কারাে নেই । হিন্দুর নেই , রাজনৈতিক নেতার নেই , মন্ত্রীর নেই , পুলিশ অফিসারের নেই । তােমরা এটা অন্যায় করছ । কথায় কথায় , যে কোন অজুহাতে আইন নিজের হাতে তুলে নিচ্ছ । এটা চলবে না । এটা করলে তােমাদের উপর গুলি চালাবাে । এটাই কি নিরপেক্ষ প্রশাসনের কথা হওয়া উচিৎ ছিল না ।
এই আজকেই ( ৯ ই জুন , ২০১৭ ) তাে টিভিতে দেখছি আমাদের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী দার্জিলিঙয়ে গােখাল্যান্ডের নামে হিংসাত্মক কার্যকলাপের বিরুদ্ধে কড়া হুমকি দিচ্ছেন । কই , কালিয়াচকে যখন গােটা থানা জ্বলে গেল ( তরা জানুয়ারী , ২০১৬ ) অথবা ধূলাগড় , নলিয়াখালি , ইলামবাজার ও আরও বহুস্থানে মুসলমানরা থানা জ্বালিয়ে দিল , তাণ্ডব করলাে , পুলিশকে পেটালাে , তখন তাে মমতা ব্যানার্জীকে এই হুমকি দিতে দেখিনি । অথবা ২০০৭ সালে যখন ইদ্রিশ আলির নেতৃত্বে তসলিমাকে কোলকাতা থেকে বিতাড়নের জন্য পার্কসার্কাসে ব্যাপক দাঙ্গা করল মুসলমানরা , ২০১০ সালে দেগঙ্গায় আটটি হিন্দু গ্রাম লুট করলাে , কালী মন্দির ভাঙল , পুলিশ ও মিলিটারির গাড়ি পুড়িয়ে দিল – তখনও তাে কমরেড বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে কোন হুমকি দিতে দেখিনি । অর্থাৎ বাঙালি হিন্দুকে হুমকি দেওয়া যায় , গােখা নেপালিদেরকে হুমকি দেওয়া যায় , কিন্তু দাঙ্গাবাজ মুসমানদেরকে হুমকি দেওয়া যায় না ।
ফিরে আসি ১৯৬৪ সালের কথায় । হজরত মহম্মদের চুল চুরি যাওয়ার অজুহাতে সারা ভারতে ওরা সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা করল । শুধু ভারতে নয় , পাকিস্তানেও বিরাটভাবে হিন্দু নিধন করল । বিশেষ করে পূর্ব পাকিস্তানে ( বর্তমানে বাংলাদেশ ) হিন্দু গণহত্যা ও হিন্দুদের উপর অত্যাচার সমস্ত সীমা ছাড়িয়ে গেল । যতদূর মনে পড়ছে তখন ভারতের কই , স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী ছিলেন গুলজারিলাল নন্দা । তিনি কলকাতায় এসেছিলেন । ঐ দাঙ্গা থামাতে তিনি কতটা কি করেছিলেন , তখন ছােট ছিলাম তাই তা আমার মনে নেই । কিন্তু বেশ কয়েকদিন পর ঐ দাঙ্গা থেমেছিল । সম্ভবতঃ তখনই প্রথম গােপাল পাঁঠার নাম শুনেছিলাম ।
আজকে ভাবি , সেই দাঙ্গার পিছনে প্রকৃত কী কারণ ছিল ? মহম্মদের চুল চুরি যাওয়া – ওটা ছিল নেহাতই অজুহাত । দাঙ্গার প্রকৃত কারণ সেটা ছিল । ১৯৪৭ সালে ১৪ ই আগষ্ট দেশ ভাগ হল , ভারতে প্রায় ১/৩ অংশে পাকিস্তান নামে ইসলামের বিজয় পতাকা উড়ল । স্বাভাবিকভাবে ভারতে তার প্রতিক্রিয়া হবার কথা ছিল । কিন্তু নেহেরু ও গান্ধী এবং তাদের অনুচররা ( এদের মধ্যে অনেকেই শ্রদ্ধেয় কংগ্রেসী নেতা ) সেই প্রতিক্রিয়া হতে দিলেন না । এই প্রতিক্রিয়া না হতে দেওয়ার প্রতিক্রিয়া হল গান্ধী হত্যার মাধ্যমে । একান্ত দেশভক্ত নাথুরাম গডসে সুচিন্তিতভাবে গান্ধীকে প্রকাশ্যে হত্যা করলেন । তাঁর আশঙ্কা ছিল , গান্ধীর জন্য ভারতের ও হিন্দুদের যা ক্ষতি হওয়ার তা তাে হয়েই গেছে , আরও কিছুদিন এইভাবে গেলে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে পূর্ব পাকিস্তান পর্যন্ত একটা সবুজ করিডোেরও দিতে বাধ্য করবেন গান্ধী । সেটা হলে পাকিস্তান যেমন পূর্ব ও পশ্চিম দুইভাগে বিভক্ত ছিল , ঠিক তেমনি খন্ডিত ভারতও আবার একবার বিভক্ত হয়ে যাবে । কাশ্মীর , উত্তর প্রদেশ , বিহার ও পশ্চিমবঙ্গের উপর দিয়ে এরকম একটি করিড়াের পাকিস্তানের দাবি ছিল । তাই নাথুরাম গডসে আর দেরি করলেন না । দেশকে বাঁচাতে গান্ধী হত্যার বদনাম মাথায় তুলে নিতে ।
গান্ধী হত্যার পর গান্ধীভক্ত ও নেহেরুভক্ত কংগ্রেসীরা যারা দেশে হিন্দু মহাসভা ও আরএসএসের উপর ঝাপিয়ে পড়ল । এই দুই সংগঠনের কাৰ্যালয়গুলি ভাঙচুর করল । পাটনাতে আরএসএস কার্যালয় ভাঙতে কংগ্রেসী দাঙ্গাকারীদের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন জয়প্রকাশ নারায়ণ । তিনি পরবর্তীকালে ‘৭০ দশকে আরএসএসের সহযােগী ভূমিকা পালন করে তার পাপের কিছুটা প্রায়শ্চিত্ত করেছেন ।
গান্ধী হত্যার পর কংগ্রেসীরা দাপালেও মুসলমানরা মাথা নীচু করেই থাকল এবং কংগ্রেসের মধ্যে ঢুকে থেকে চুপ করে মজা দেখতে লাগল । তারপর ১৯৫০ সালে পূর্ব পাকিস্তানে বিরাট হিন্দু বিরােধী দাঙ্গা হল । সারা ভারতে তার কোন প্রতিক্রিয়া হল না । ব্যতিক্রম শুধু বিহারের ভাগলপুর । সেখানে হিন্দুরা প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিল । লক্ষ লক্ষ হিন্দু সর্বস্ব হারিয়ে উদ্বাস্তু হয়ে পশ্চিমবঙ্গে চলে এল , কিন্তু প্রগতিশীল উদার পশ্চিমবঙ্গে কোন প্রতিক্রিয়া হল না ।
তারপর ঘটল আর একটি ঘটনা । ১৯৬২ সালে ভারত চীন যুদ্ধ । এই যুদ্ধে ভারতের শােচনীয় পরাজয় হল । আমাদের ১৪০০০ সৈন্য নিহত হলেন । আমাদের জাতির মাথা নীচু হয়ে গেল । হীনমন্যতা গ্রাস করল সমগ্র জাতিকে । জাতি মানেই হিন্দু ।
অর্থাৎ ১৯৪৭ থেকে ১৯৬২। মুসলমানরা । দেখল ১/৩ অংশ ভারতের ইসলামিকরণের পরেও , ইসলামের হাতে কোটি কোটি হিন্দুর অবর্ণনীয় দুর্দশার পরেও কোন হিন্দু প্রতিক্রিয়া হল না । হিন্দু স্বাভিমান জাগ্রত হল না । বরং হিন্দু নেতা সাভারকর ও গােলওয়ালকারকে জেলে পােরা হল । হিন্দু মহাসভা ও আরএসএসকে নিষিদ্ধ করা হল । এবং তারপর ১৯৫৩ সালে কাশ্মীরেশ্যামাপ্রসাদকেও হত্যা করা হল । তার উপর ভারত ১৯৬২ সালে রাষ্ট্রীয়ভাবে পর্যূদস্ত হল । ওদিকে চীনের হাতে সজোরে থাপ্পড় খেয়ে নেহেরু পক্ষাগ্রস্ত হয়ে শয্যাশায়ী । এইসব পরিস্থিতির সামগ্রিক পর্যালােচনা করে মুসলমানরা নিজেদের অবস্থানকে যাচাই করে নিতে চাইল । তারা এখানে অন্য সবার মতাে সমান নাগরিক , না দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক হিসাবে তাদেরকে থাকতে হবে , নাকি তারা প্রথম শ্রেণীর উপরেও সুপার শ্রেণীর নাগরিক হিসাবে থাকতে পারবে , তা যাচাই করার জন্যই ১৯৬৪ সালে একটা বাজে অজুহাতে তাদের ঐ সারা দেশে দাঙ্গা বাধানাে । ঐ দাঙ্গা করে তারা জল মেপে নিল । ভারতে তাদের অবস্থান অন্যদের থেকে কোনাে অংশে কম নয় , বরং একটু বেশি — তারা বুঝে গেল । তারপর থেকে তারা আর পিছন ফিরে তাকায়নি । ক্রমাগত এগিয়ে গেছে । সংখ্যা বাড়িয়ে , চাহিদা বাড়িয়ে , দাবি বাড়িয়ে , আবদার বাড়িয়ে , বেআইনি কার্যকলাপ বাড়িয়ে । লক্ষ্য একটাই- কোরান হাদিস নির্দেশিত গােটা ভারতের ইসলামীকরণ করা ।
হিন্দুর মধ্যে এর প্রতিক্রিয়া হয়েছিল । ১৯৬৭ সালের সাধারণ নির্বাচনে সারা দেশে ১২ টি বড় রাজ্যে কংগ্রেস পরাজিত হয়েছিল । তার পিছনে অন্যান্য কারণের সঙ্গে এই কারণটিও যুক্ত ছিল – মুসলমানদের ঔদ্ধত্য বৃদ্ধি এবং তার কাছে কংগ্রেসের নতি স্বীকার । কংগ্রেস শাস্তি পেল বটে , কিন্তু দাঙ্গাকারী বিচ্ছিন্নতাবাদী মুসলমানরা কোন শাস্তি পেল না । এরজন্য দায়ী কে ? আমাদের দেশের মুসলিম তােষণকারী ভন্ড সেকুলারবাদীরা ।
সংগৃহীত স্বদেশ সংহতি সংবাদ জুন ২০১৭
@ TAPAN GHOSH
Collected from Subhankar HA Nag.
