কে দায়ী এর জন্য?

ছেলের বৌ?

একটু ভেবে দেখুন।

বাবা মা সন্তানকে ভালোবেসেছেন, কষ্টস্বীকার করেছেন, ত্যাগ করেছেন। কিন্তু সবই তো নিজের সন্তানের জন্য!

এর মধ্যে কি একটুও মহত্ব আছে?

নেই।

নিজ সন্তানকে তো কুকুর বেড়ালও ভালোবাসে। কুকুর বেড়ালের যেটুকু মহত্ব ঠিক সেটুকুই মহত্ব মানুষের নিজ সন্তানকে ভালোবাসায়।

নিজ সন্তানকে মানুষ ভালোবাসে কোনো মহৎ প্রেরণা থেকে নয়, প্রাকৃতিক তাগিদে। প্রাকৃতিক তাগিদে তো আমাদেরকে পায়খানা প্রস্রাব করতেও যেতে হয়!

তাতে কি কোনো মহত্ব আছে? নেই।

যে কাজ আমাদেরকে বাধ্য হয়ে করতে হয়, তাতে কোনো মহত্ব দাবী করা যায় না। ঠিক সেইরকম নিজ সন্তানকে ভালবাসায় কোন মহত্ব দাবী করা যায় না।

নিজ সন্তানকে ভালবাসায় আছে প্রাকৃতিক বাধ্যবাধকতা আর স্বার্থপরতা। সন্তান তো সেটাই শিখেছে আপনাদের কাছ থেকে!

মহত্ব আছে পাশের বাড়ীর গরীব ছেলেটাকে ভালবাসায়। সেটা করলে তা হবে স্বার্থপরতার উর্ধ্বে। আর সেটাই সন্তান শিখবে। নিজ সন্তানকে ভালবাসা প্রাকৃতিক বাধ্যবাধকতা। নিজ মা বাবাকে ভালবাসা প্রাকৃতিক বাধ্যবাধকতা নয়।

তার জন্য চাই কর্তব্যবোধ, এবং/অথবা মহৎ প্রেরণা।

আমাদের সামাজিক দায়িত্ব ও কর্তব্য আমাদেরকে প্রাকৃতিক বাধ্যবাধকতার উর্ধ্বে উঠতে শেখায়। পরিবার, আত্মীয়, প্রতিবেশী, সমাজ, রাষ্ট্র ও প্রকৃতির প্রতি কর্তব্য পালন শেখায় (শ্রী রামকৃষ্ণ কাশী গিয়ে পায়খানা করার জন্য গঙ্গা থেকে এক কিলোমিটার দূরে যেতেন)।

আমরা আধুনিকতার দোহাই দিয়ে সেই কর্তব্যগুলো পালন করি না। নিজ সন্তানকে তাদের দাদু ঠাকুমার কাছ থেকে ছিনিয়ে নিই। গরীব আত্মীয়কে এড়িয়ে যাই, অস্বীকার করি। পাড়া প্রতিবেশীর প্রতি কর্তব্য করি না। সন্তানকেও করতে দিই না। আর এই সবকিছুকে যুক্তি দিয়ে ঠিক প্রমাণ করতে চাই। অর্থাৎ, নিজেরা স্বার্থপরতা করি। সন্তানকে তাই শেখাই। সন্তান তাই শেখে।

এই স্বার্থপরতার বিষবৃক্ষ নিজেরা রোপণ করি। সেই বৃক্ষ বড় হয়। তখন তারই ফল বৃদ্ধ বয়সে আমাদেরকে ভোগ করতে হয়। আর আমরা তখন অন্যকে দোষ দিই। বেশী দোষ দিই ছেলের বৌকে।

মনে রাখবেন, সবাই নিজের হাতে রোপণ করা গাছেরই ফল খাচ্ছেন।

লেখক পথপ্রর্শক মাননীয় তপন ঘোষ

3rd September 2017

সংকলন:-শুভঙ্কর নাগ