লেখক পথপ্রদর্শক মাননীয় তপন ঘোষ
আন্না হাজারে একটা বড় ক্ষতি করে দিয়ে গেলেন । রাজনৈতিক দল ও নেতাদের প্রতি জনসাধারণের বিতৃষ্ণা আগে থেকেই ছিল , সেটাকে আরও বহুগুণ বাড়িয়ে দিলেন । কিন্তু ক্ষতি সেটা নয় । এই রাজনৈতিক দল ও নেতারা শ্রদ্ধার যােগ্য মােটেই নয় । ক্ষতিটা হল এই যে , দেশের সব সমস্যার মূল শুধু রাজনীতিই — এই ভুল ধারণাটা আরও দৃঢ় হল । অর্থাৎ , সাধারণ মানুষের কোন দোষ নেই , তারা দায়ী নয় , তাদের কোন ঘাটতি নেই দেশের ও সমাজের বর্তমান অধঃপতনে – এই ধারণাটা আরও জোরাল হল । সুতরাং , রাজনৈতিক দল ও নেতাদেরকে খুব গাল দাও , আমাদেরকে আর কিছু করতে হবে না । আমাদের নিজেদের কোনকিছু সংশােধন করতে হবে না – পাবলিক তাে এটাই চায় । আন্না হাজারে তাই পাবলিকের কাছে এত প্রিয় ।
খুব মােটা কথায় একটা প্রশ্ন করা যাক । এখন হয় রাজনীতি আমাদের সর্বনাশ কর দিচ্ছে । কিন্তু দেশটা যখন মুসলমান ও ইংরেজদের কাছে পরাধীন হয়েছিল , তখন কি এইসব দল ছিল , না এইরকম নেতা ছিল ? ছিল না । যখন সােমনাথের মন্দির বারবার লুট হয়েছিল , তখন এরা ছিল ? ছিল না । তাহলে কেন এগুলাে হয়েছিল ? আন্না হাজারে এই প্রশ্নের জবাব দিতে পারবেন কিনা জানি না , কিন্তু তাঁর দাবী ও আন্দোলনের মধ্যে এই প্রশ্নের জবাব পাওয়া যাবে না ।
আমার এই লেখাটির বিষয় আন্না হাজারে নয় । আমি তাঁকে কাছ থেকে দেখেছি , মহারাষ্ট্রের গ্রামে তাঁর সামাজিক কাজের কথা খুব ভালভাবে জানি । তাঁকে ও তাঁর কাজকে আমি শ্রদ্ধা করি । তাঁর বর্তমান আন্দোলনের দাবীকেও পরিপূর্ণ সমর্থন করি । তবুও এই আন্দোলনের উপরােক্ত কুফল সম্বন্ধে আমি শঙ্কিত ।
এই শঙ্কা আমার মনে আরও জোরালভাবে উপস্থিত হয়েছে এই ২০১১ সালের মুসলমানদের ধর্মীয় অনুষ্ঠান বকরিদের ঠিক আগে । একটা বিরাট ঘটনা চোখের সামনে ঘটছে । ঘটনাটি খারাপ ও বেআইনী । শুধু তাই নয় , এটি হিন্দু বিরােধী , হিন্দুদের ধর্মে আঘাত দেওয়ার জন্যই শুধু করা হয় । এটিকে আটকানাে বা প্রতিকার করার দায়িত্ব প্রশাসনের । প্রশাসন রাজনীতি দ্বারা পরিচালিত । বর্তমান রাজনীতি তো খারাপ । সুতরাং তারা ভােটের লােভে প্রশাসনকে নিষ্ক্রিয় ও বিপথগামী করছে । তাই প্রশাসন আইনের শাসন বজায় রাখার ও কোর্টের আদেশ পালন করার কোন চেষ্টাই করছে না । সুতরাং , সব দোষ রাজনীতির , আর আমরা সব ধােয়া তুলসীপাতা , রাজনীতি ছাড়া আর কারও কোন দোষ নেই । আহা , এর থেকে ভাল কথা আর কি হতে পারে ! আমি তাে বেঁচে গেলাম । সুতরাং , সকালে উঠে পত্রিকা হাতে নিয়েই খেলার পাতা , আর সন্ধ্যায় টিভিতে বচ্চনের কৌন বনেগা ক্রোড়পতি – এই দিয়েই তাে আমার নাগরিক কর্তব্য পালন করছি ।
মূল বিষয়ে আসার চেষ্টা করি । মুসলমানদের দুটো ইদ । একটা খুশীর ইদ , একটা কাটার ইদ । এই কাটার ইদটা ওদের কাছে মােটেই খুশীর ইদ নয় । এটা ওদের সংকল্পের অনুষ্ঠান ও আল্লার কাছে প্রিয় বস্তুকে উৎসর্গ করার অনুষ্ঠান । ওরা বলে কুরবানী । এতে ওরা কোন পশুকে আড়াই প্যাচ দিয়ে কাটে । পশুটি যন্ত্রণায় ছটফট করে । ওদের শিশু , বালক , কিশােরেরা নতুন জামা প্যান্ট পরে এই কুরবানী দেখতে আসে । দেখতে দেখতে কী ধরণের মানসিক শিক্ষা পায় , সেটা আন্দাজ করা আমি পাঠকের উপরেই ছেড়ে দিচ্ছি । ওদের এই অনুষ্ঠানের নাম ইদ্-উজ-জোহা । আর খুশীর ইদের নাম ইদ – উল – ফিতর । এই কুরবানীকে আমাদের বলির সঙ্গে তুলনা করা ঠিক হবে না । এটা ওদেরও ভাল লাগবে না , আমাদেরও ভাল লাগবে না । এদুটো এক নয় । ওদের ধর্ম অনুসারে – কুরবানীর পশু ওদের প্রিয় বস্তু । আমাদের ধর্ম অনুসারে , আমাদের বলির পশু আমাদের অপ্রিয় ও ত্যাজ্য বস্তু । আমরা তামসিকতার প্রতীক হিসাবে পাঁঠা ও মােষ বলি দিই । তাই ইদের কুরবানী আর মহাষ্টমীর বলি এক নয় ।
একটু সাইড লাইনে যাই । আমার এই লেখায় ‘ ওরা-আমরা ” অথবা আমাদের-ওদের ” – এই ধরণের শব্দ শুনতে হয়ত অনেকের ভাল না লাগতে পারে । তা সত্ত্বেও আমি জেনেশুনেই এই ধরণের শব্দ ব্যবহার করছি । কারণ , সাপকে মাসী , আর মাসীকে সাপ বলতে আমি রাজি নই । সাপকে মাসী বললে উপকার কিছু হয় কি না জানা নেই , কিন্তু অপকার বিরাট হয় । কোন শিশু , যে আগে মাসী দেখেছে কিন্তু সাপ দেখেনি , সে যখন পরে সাপ দেখবে , তাকে সে মাসী ভেবে আদর করতে যাবে , আর বিপদ ঘটবে । আমাদের দেশের সেকুলার বুদ্ধিজীবীদের প্রচেষ্টায় এদেশের বহু সাধারণ মানুষের বুদ্ধিই ওইরকম শিশুর মতই হয়ে আছে । তারা সাপকে মাসী ভেবে আদর করতে যায় । তারপর পাছায় লাথি খেয়ে কাউকে পূর্ববঙ্গ ছাড়তে হয় , কাউকে পার্ক সার্কাস ছাড়তে হয় , কাউকে বা মেটিয়াবুরুজ – মগরাহাট ছাড়তে হয় ।
আমি কিন্তু এই ব্যাপারটায় মুসলমানদেরকে সাপ বলছি না , এবং হিন্দুদের এই লাথ খেয়ে পালিয়ে আসার জন্য শুধু মুসলমানদেরকেই ১০০ শতাংশ দায়ী করছি না । মুসলমানরা অবশ্যই হিন্দুর পিছনে লাথি মেরেছে । সেজন্য তারা দায়ী । কিন্তু পুরােটা শুধু তারাই দোষী নয় । যারা লাথ খেয়েছে – তাদেরও দোষ অনেকটাই আছে । কী দোষ ? রাশিয়া , চীনে মগজ গচ্ছিত রাখা কম্যুনিষ্টদের মত আমি কখনই একথা মেনে নেব না যে , পূর্ববঙ্গে সব হিন্দুরা ছিল জমিদার । তারা গরীব মুসলমান চাষীদের উপর খুব অত্যাচার আর ঘৃণা করেছিল । তারই প্রতিক্রিয়াতে হিন্দুদেরকে মুসলমানের লাথি খেতে হয়েছে । এ হচ্ছে কম্যুনিষ্ট নির্বোধদের যুক্তি । পূর্ববঙ্গের নমঃশূদ্ররা কেউ জমিদার ছিল না । তারাও হিন্দু জমিদারদের হাতে শােষিত ও লাঞ্ছিত হয়েছিল । তাহলে যােগেন মন্ডল পাছায় লাথি খেলেন কেন ? পি.আর.ঠাকুর , উপেন বিশ্বাসরা ঠাকুরনগরে এলেন কেন ? বনগাঁ , বাগদা , গাইঘাটায় , পিলিভিতের পাহাড়ে আর গড়চিরােলীর জঙ্গলে যে কয়েক কোটি বাঙালী রিফিউজী আছে তারা কি সব জমিদারতনয় নাকি ? তারা লাথ খেল কেন ? সুতরাং , ওইসব মগজ বন্ধক দেওয়া কম্যুনিষ্ট নির্বোধদের কথা বাদ দিন । কেন হিন্দুরা ( মনমােহন সিং , আদবানি সহ ) লাথ খেল এবং এখনও খাচ্ছে , তার সত্য কারণটা খুঁজে বের করার চেষ্টা করতে হবে ।
এটা ঠিক যে , মুসলমানরা অসহিষ্ণু এবং অপরের সঙ্গে শান্তিপূর্ণভাবে থাকতে পারে না । তার উপর তাদের ধর্মের আদেশ অনুসারে সব অন্য ধর্মের মানুষকেই তারা বলপ্রয়ােগ করে মুসলমান বানাতে চায় । বিশ্বের যেখানেই তাদের একটু শক্তি হয়েছে , সেখানেই তারা অন্য ধর্মের উপর অত্যাচার করেছে ও জোর করে ধর্মান্তরিত করেছে । তাই অবিভক্ত ভারতে ও যেখানে তাদের সংখ্যা ও শক্তি বেশী ছিল সেখানেই তারা হিন্দুদের পিছনে লাথি মেরেছে । তবু বলছি – তারাই একমাত্র দায়ী নয় ।
সুন্দরবনের ধারে ধারে তাে আমাদের কয়েক হাজার গ্রাম আছে । এই গ্রামগুলাে লােহার তারের জাল দিয়ে ঘেরা নয় । তাও সেখানে সব লােক বাঘের কামড়ে তাে মারা যায়নি । বছরে মাত্র ৫-৭টা লােক বাঘে খায় । বেশী মানুষ যে বাঘের কামড়ে মারা যায় না , তার কারণ হল ওই জঙ্গলের ধারের মানুষরা বাঘকে বাঘ বলেই জানে । মাসী বলে মনে করে না । তাই বাঘের থেকে সাবধান থাকে , এবং বিপদ আসার আগে থেকেই ব্যবস্থা অবলম্বন করে । বাঘ একবার ঘাড়ে পড়লে আর ব্যবস্থা নিয়ে বেশী লাভ হয় না । বাঘকে মাসী বলে মনে করলে আগে থেকে ব্যবস্থা নিত না । বেঘােরে মারা পড়ত । গ্রামগুলাের সব লােক মারা যেত ।
প্রসঙ্গ – ওরা আমরা , ওদের আমাদের । সব মানুষই এক । সবই ঈশ্বরের সৃষ্টি । এভাবে বিভাজন বা বিভেদ করা কি ঠিক ? বেচারা বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য্য তাে ‘ ওরা -৩৫ , আমরা ২৩০ ‘ বলেই জনগণের চক্ষুশূল হয়ে গেলেন । ওরা – আমরা ’ – র ভুলের খেসারত দিতে প্রায় বনবাস নিয়েছেন । আমিও সেইরকমই ‘ ওরা-আমরা ‘ বলছি । কিন্তু বুদ্ধের সঙ্গে আমার একটু তফাৎ আছে । উনি তৃণমূল আর সিপিএমকে বলেছিলেন , আমি মুসলমান আর হিন্দুকে ‘ওরা – আমরা’ বলছি । ওরা আমরা কি এক ? যদি এক হয় , তাহলে পাকিস্তান হল কেন ? তাহলে কাশ্মীরে হিন্দুরা থাকতে পারল না কেন ? তাহলে মেটিয়াবুরুজ , পার্ক সার্কাস , রাজাবাজার থেকে হিন্দুরা পালাচ্ছে কেন ? যদি এক হবে তাহলে ৫০০ ঘর হিন্দুর মধ্যে ৫ ঘর মুসলমান নিরাপদে বাস করতে পারে , কিন্তু ৫০ ঘর মুসলমানের মধ্যেও ৫ ঘর হিন্দু নিরাপদে বাস করতে পারে না কেন ? যদি এক হবে , তাহলে মহারাষ্ট্র , বিহার , আসামের মুখ্যমন্ত্রী মুসলমান হতে পারে , কিন্তু কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী একজন হিন্দু হতে পারে না কেন ? যদি এক হবে তাহলে স্বাধীনতা পূর্ববর্তী অখন্ড বাংলায় তিনজন মুখ্যমন্ত্রীর মধ্যে ( নাজিমুদ্দিন , ফজলুল হক , সুরাবর্দী ) একজনও হিন্দু হলেন না কেন ? যদি এক হবে তাহলে গত হাজার বছরে ৩০ হাজার মন্দির ভাঙল ওরা , আর মাত্র একটা অব্যবহৃত মসজিদ ভাঙতেই এত হৈচৈ কেন ? যদি এক হবে তাহলে করাচীতে আদবানির বাড়ীর চিহ্নমাত্র নেই , অথচ মুম্বাইতে জিন্নার বাড়ী এখনও সুরক্ষিত কেন ? যদি এক হবে তাহলে দুর্গাপূজার মন্ডপ মসজিদের আকৃতিতে হতে পারে , কিন্তু ইদের গেট কোন সুন্দর মন্দিরের ধাঁচে কেন হতে পারে না ? যদি এক হবে , তাহলে ভারতে এক লক্ষ মসজিদ আছে , আর আরবদেশে একটিও মন্দির নেই কেন ? ওদেশে তাে লক্ষ লক্ষ হিন্দু কাজ করছে ।
এ প্রশ্নগুলির উত্তর ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীরা দিতে পারবে না । কম্যুনিষ্টরাও পারবে না । সুতরাং , ওরা আমরা এক নয় । বিভাজনটা সাম্প্রদায়িক তপন ঘােষ করছে না । বিভাজনটা আছে ।
তারপর উপদেশ আসবে – এই ‘ ওরা-আমরা ’ কি এক করার চেষ্টা করা উচিত নয় ? সব মানুষ এক হব এটাই কি ভাল নয় ? কবিরা বলেছেন – সবার উপরে মানুষ সত্য , একই বৃন্তে দুইটি কুসুম , এসাে হে আর্য এসাে অনার্য হিন্দু মুসলমান । আরও কত কিছু বলেছেন কবিরা , মহাপুরুষরা । রামকৃষ্ণও নাকি তাই বলেছেন ! তাহলে সব মানুষকে , হিন্দু মুসলমানকে এক করার চেষ্টা করা কি উচিত নয় ? এই চেষ্টাই কি মানবতা , বিশ্ব মানবিকতা নয় ?
হ্যাঁ , চেষ্টা করা উচিত । বিশ্বের সব মানুষকে , আর আমাদের দেশে হিন্দু মুসলমানকে এক করার চেষ্টা করা উচিত । শুধু একটু চোখ কান খুলে করা উচিত , আর স্বর্গীয় শিবপ্রসাদ রায়ের কথা অনুযায়ী – ‘ একটু কান্ডজ্ঞান রেখে করা উচিত । ’ পূর্ববঙ্গের উদার প্রগতিশীল হিন্দুরা ওই ‘ ওরা-আমরা ’ কে এক করার চেষ্টা করছিলেন । আপ্রাণ চেষ্টা করছিলেন । তাই , পূর্ববঙ্গে কমুনিষ্টদের ঢুকতে দিয়েছেন , গান্ধীকে কাপড়ের আঁচল বিছিয়ে ঢুকতে দিয়েছেন , কিন্তু সাভারকারকে ঢুকতে দেন নি , শ্যামাপ্রসাদের হিন্দু মহাসভাকে প্রাদেশিক ও কেন্দ্রীয় আইনসভায় একটা আসনেও জয়ী করেন নি । এই ভাবে ‘ ওরা-আমরা ‘কে এক করার আপ্রাণ চেষ্টা করতে গিয়ে কান্ডজ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিলেন পূর্ববঙ্গের উদার প্রগতিশীল ধর্মনিরপেক্ষ হিন্দুরা । এই কান্ডজ্ঞান হারানাের ফলশ্রুতিই হল – লাথির এক ধাক্কায় শিয়ালদা স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে মুখ থুবড়ে পড়া ।
সুতরাং , ‘ ওরা-আমরা ‘ কে একরার চেষ্টা করার সময় একটু চোখ কান খুলে রেখে করতে হবে । আর যতক্ষণ একনা হচ্ছে , ততক্ষণ ‘ওরা-আমরা’ কে মেনে নিয়েই চলতে হবে । আমি এই প্রসঙ্গেই সাপকে মাসী বলার বিপজ্জনক ভুলের কথা বােঝানাের চেষ্টা করছিলাম । মুসলমানরা সাপ না বাঘ না হায়েনা না আমাদের মতই সাধারণ মানুষ । সে বিচার পাঠক করুন । কিন্তু ‘ওরা-আমরা’কে এক ভাবাটাই হল আমার মতে সাপকে মাসী ভাবা । এই ভুলের খেসারত হিন্দুরা আগেও দিয়েছে , আবারও দিতে হবে ।
আমিও তাে চাই , ‘ ওরা-আমরা ’ এক হয়ে যাক । সব শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষই তাই চায় । কিন্তু চাইলেই কি হয়ে যায় ? হয় না । তার জন্য কিছু করতে হয় । কি করতে হবে ? শুধু হিন্দুদেরকে উপদেশ দেওয়া – সব মানুষ সমান , সবাই ভাইভাই , সবারই চামড়ার রঙ আলাদা হলেও রক্তের রঙ এক — এইসব উপদেশেই ‘ ওরা-আমরা ’ এক হয়ে যাবে ? এইসব উপদেশ প্রদানকারীদের জিজ্ঞাসা করতে চাই –কটা মুসলিম পাড়ায় গিয়ে , কটা মুসলমান গ্রামে গিয়ে , কটা মসজিদে গিয়ে , কটা মাদ্রাসায় গিয়ে , কটা মক্তবে গিয়ে , কটা এতিমখানায় গিয়ে , কটা মাজার শরীফে গিয়ে , কটা মিলাদে গিয়ে , কটা জলসায় গিয়ে , কটা জুম্মার নামাজে গিয়ে আপনি এই উপদেশ দিয়েছেন নিজের বুকে হাত রেখে উত্তর দিন । আরও উত্তর দিন ওইসব জায়গায় আপনি কত মিনিট কথা বলার ( উপদেশ ) সুযােগ পেয়েছেন , কটা মুসলমানকে আপনার কথা শােনাতে পেরেছেন ? ‘ সব মানুষ এক ’ এই উপদেশ শুনে তারা কী উত্তর দিয়েছে , কতটা ইতিবাচক সাড়া পেয়েছেন ? আপনার এই উপদেশকে তারা কতটা সমর্থন করেছে ? এগুলি পরিমাপ করে , তবেই না বােঝা যাবে যে ‘ ওরা-আমরা ’ কে এক করা যাবে কিনা ? এবং করা গেলে কতটা সহজে বা কতটা বাধা পার করে তবে করা যাবে ! একবারও মুসলমান এলাকায় , মসজিদে মাদ্রাসায় না গিয়ে শুধু হিন্দু — গুলাে কে জ্ঞান দিয়েই ‘ ওরা-আমরা ’ এক হয়ে যাবে ? আপনি যদি তাই মনে করেন , তাহলে আমি আপনাকে মনে করি ন্যাকা অথবা ভন্ড অথবা নির্বোধ ।
মুসলমানরা অন্ততঃ আপনার মত অতটা ভন্ড নয় । ওদেরও ‘ তাকিয়া ’ ( ধর্মের জন্য মিথ্যাচার করা ) আছে । তবুও আমাদের সেকুলারদের থেকে ওরা বড় ভন্ড হতে পারে নি । ওদের সামনে গিয়ে আপনি যেই বলবেন আমরা তােমরা এক , সব মানুষ সমান – তখনই ওদের মনে প্রশ্ন উঠবে , তাহলে মােমিন আর কাফের কারা ? খােদাতালা তাে কোরাণে বলে দিয়েছেন , মােমিন আর কাফের আলাদা আলাদা শুধু নয় , তারা পরস্পরের শত্রু । শুধু তাই নয় , মােনিনরা আল্লার প্রিয় , আর কাফেরদেরকে আল্লা একেবারেই দেখতে পারেন না । কাফেরদের জন্য আল্লা দোজখের আগুন সব সময় জ্বালিয়ে রেখেছেন । কাফের কারা ? যারা চুরি ডাকাতি করে , খুন করে , ধর্ষণ করে , তারা ? না , তারা কাফের নয় যদি তারা আল্লা এবং রসুলকে মানে । যারা চুরি করে না , রাহাজানি করে না , মিথ্যা কথা বলে না , খুন ধর্ষণ করে না , কিন্তু আল্লা না মেনে অন্য দেবতাকে মানে এবং রসুলকে মানে না – তারা কাফের । সেই ছােটবেলা থেকে সরল ও বিশ্বাসী মুসলমানরা মসজিদে মক্তবে মাদ্রাসায় গিয়ে মৌলবী মৌলানা ইমাম ও হুজুরদের কাছ থেকে এই কথা শুনে এসেছে , সাক্ষরেরা কোরাণে হাদীসে পড়ে এসেছে । আর আপনি তাদেরকে গিয়ে বলছেন – “ আমরা তােমরা সমান ’ , ‘ মােমিন কাফের এক । তাহলে কি কোরাণ হাদীসে মিথ্যা কথা লেখা আছে ? ইমাম মৌলবী সাহেবরা ভুল কথা বলেন ? হে আমার উপদেশ প্রদানকারী ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীরা , মুসলিম ভাইদের এই প্রশ্নের উত্তর আপনাকে দিতে হবে । উত্তর দিয়ে তাদেরকে সন্তুষ্ট করতে হবে । তবে তাে তারা ওই ‘ এক হওয়ার ’ কথা বুঝতে পারবে , আর গ্রহণ করবে । এখন বলুন , আপনি ওই প্রশ্নের কী উত্তর দেবেন ? বলবেন কোরান ভুল , মৌলবী সাহেবরা মিথ্যা কথা বলেন ? আপনি বলবেন তাে যে , মােমিন কাফের আলাদা নয় , এক ? তাই কাফেরের মােমিন হওয়ার দরকার নেই । যে যার নিজের ধর্ম নিয়ে থেকেই ভগবানেরও প্রিয় হওয়া যায় , আল্লারও প্রিয় হওয়া যায় । মসজিদের চত্বরে দাঁড়িয়ে জুম্মাবারের দুপুরের নামাজের পর ছােট্ট একটা হ্যান্ড মাইক নিয়ে এই কথা গুলাে বলবেন তাে ? যদি বলতে পারেন , তাহলে ‘ ওরা-আমরা ‘ কে এক করার প্রক্রিয়াটা শুরু হবে মাত্র । চলুন শুরু করা যাক । বলুন কোন্ মসজিদে প্রথম যাবেন ? চিৎপুরের নাখােদা মসজিদে , নাকি ইমাম বরকাতির টিপু সুলতান মসজিদে ? আমার অবশ্য বেশী পছন্দ ক্যানিং লাইনে ঘুটিয়ারী শরীফ । ওখানে গিয়ে এইসব প্রচার করলে আপনার কান্ডজ্ঞান ‘ খুব তাড়াতাড়ি ফিরে পাবেন— গ্যারান্টি দিয়ে বলছি । স্বর্গে শিবপ্রসাদ রায় একটু স্বস্তি পাবেন আপনার কান্ডজ্ঞান ফিরে আসলে । যদি সময় থাকতে কান্ডজ্ঞান ফিরে আসে তাহলে আমাদের পশ্চিমবঙ্গটা আর পূর্ববঙ্গ হবে না । দেরী হলে পশ্চিমবঙ্গকে বাঁচানাে যাবে না ।
চেষ্টা করি মূল জায়গায় ফিরে আসার । আমার দৃষ্টিতে মুসলমানরা সাপ নয় । মুসলমানরা মুসলমান । ‘ হিন্দু আর মুসলমান সমান ‘ , ‘ ওরা-আমরা ’ এক এই ধারণাটাই হল আমার মতে সাপ । কারণ এটা ঠিক নয় । এটা ভুল , এটা মিথ্যা । এই মিথ্যাটাকে সত্য বলে মনে করাটাই হল , আমার মতে , সাপকে মাসী বলা । বলা শুধু নয় , মনে করা । সাপকে মাসী ভাবলে , মিথ্যাকে সত্য ভাবলে – সর্বনাশ হবে । আগেও হয়েছে , এখনও হচ্ছে , পরেও হবে । সাপের কামড়ে পৃথিবীর ৭০০ কোটি লােক মারা যায়নি । কারণ , লোকেরা সাপকে সাপ বলেই জানে , মাসী বলে ভাবে না । কিন্তু হিন্দুরা , শিক্ষিত অশিক্ষিত সবাই এই মিথ্যাটাকে সত্য বলে মনে করে , তাই মরে । গান্ধারে মরেছে , সিন্ধে মরেছে , পাঞ্জাবে মরেছে , পূর্ববাংলায় মরেছে , কাশ্মীরে মরেছে । সাপকে মাসী বলে না ভাবলে মরত না ।
সুতরাং এখন কর্তব্য কী ? পশ্চিমবঙ্গ ও আসামের মৃত্যু শিয়রে । বাংলাদেশ গ্রাস করে নিচ্ছে । মুসলিম এলাকা ছেড়ে হিন্দু পালিয়ে যাচ্ছে । ওই এলাকায় পুলিশ ঢুকতে পারে না । মুসলিমবহুল স্থানে থানা ও ফাঁড়িগুলােতে পুলিশ প্রাণ হাতে করে ভয়ে ভয়ে থাকে । কাপুরুষ নির্বীর্যরা যেমন বাইরে অপমানিত হয়ে ঘরে এসে বৌ – এর উপর বীরত্ব ফলায় , ঠিক তেমনি মুসলমানদের দেশবিরােধী , আইনবিরােধী ও হিন্দুবিরােধী কাজ একটুও আটকাতে না পেরে এবং তাদের কাছে মার খেয়ে ও চোখের সামনে সরকারী সম্পত্তি ধ্বংস হতে দেখে , পুলিশ নেড়িকুত্তার মত পালিয়ে এসে হিন্দুদের উপর হম্বিতম্বি করে আর আইন শেখায় । আমার এইসব কড়া কড়া কথায় যারা মনঃক্ষুন্ন তাদেরকে অনুরােধ করব আমাদের ওয়েবসাইটে ( hindusamhati.blogspot . com ) ২০১০ সালের জুলাই ও সেপ্টেম্বর মাসের ছবিগুলাে দেখুন , পুলিশ সম্বন্ধে আমার কথাগুলাের সত্যতা বুঝতে পারবেন । আর সদ্য কুলপিতে গত ২৪ অক্টোবর তারিখে কুলপি থানার বীরপুঙ্গব পুলিশেরা । মুসলিম আক্রোশের হামলা থেকে পুলিশ আবাসনে নিজেদের পরিবারের মা-বৌদের শ্লীলতা রক্ষা করতে পারেনি । এরকম ঘটনা পশ্চিমবঙ্গ ও আসামে শত শত ঘটছে । সংবাদমাধ্যমে তার অতি অল্পই প্রকাশিত হয় । এই তাে পুলিশের অবস্থা । পুলিশ হিন্দুকে বাঁচাতে পারবে না । পশ্চিমবঙ্গকেও পারবেনা । তার উপরে হিন্দুরা সাপকে বলছে মাসী । বলছে সব মানুষ এক , মােমিন কাফেরও এক । হিন্দুরা এই অতি সহজ কথাটা বুঝতে পারছে না যে , সব মানুষ এক , ওরা আমরা এক — এই কথাগুলাে কাফেররা বােঝে , মােমিনরা বােঝে না । কারণ তাদের ধর্মীয় শিক্ষায় মােমিন আর কাফের কখনও এক হতে পারে না ।
তাহলে কর্তব্য কী ? সাধারণ হিন্দুদেরকে ওই সাপকে মাসী বলা ছাড়াতে হবে । তাই যখনই কোন সেকুলার ব্যক্তি ‘ হিন্দু মুসলমান ’ , ‘ ওরা – আমরা এক এই বাণী দিতে আসবে – তখনই তাদেরকে করজোড়ে অনুরােধ করে অথবা ঘাড় ধরে বলতে হবে , এক্ষুনি চলুন কোন মুসলিম এলাকায় আর মসজিদে । সেখানে গিয়ে এই উপদেশগুলাে দেবেন । আগে আপনার মুসলিম ভাইদেরকে আর মৌলবীসাহেবদেরকে শেখাবেন – মানুষের মধ্যে মােমিন – কাফেরে কোন তফাৎ নেই , মানুষের একটাই জাত , শিব আর আল্লা এক , জেহাদ করে মানুষ মারলেও সেটাও খুন , অহিংসা শ্রেষ্ঠ , জিন্নার থেকে গান্ধী শ্রেষ্ঠ , পরােপকার ও সৎকাজ করাটাই বড় কথা , আল্লা ও রসুলকে না মেনেও যদি সৎকাজ কর তাহলেও আল্লা খুশী হবেন , মুসলিম উম্মা হিন্দু উম্মা এসব আলাদা হয় না , মানুষের একটাই উম্মা ( জাত ) মানব উম্মা , ধর্ম নিয়ে মাতামাতি করতে নেই , মানুষকে ভালবাসতে হয় , সন্তানদের ভাল করে লেখা পড়া শেখাতে হলে জন্ম নিয়ন্ত্রণ করতে হবে । এইসব কথা মসজিদের সামনে গিয়ে আগে বলুন । তার পর হিন্দুদেরকে বােঝাতে আসবেন ।
এই কাজটা করতেই হবে । মুসলমানদের মাথায় লাঠি মারতে হবে না । তার থেকে অনেক বেশী দরকার এইসব দিব্যজ্ঞানী হিন্দুদের কান্ডজ্ঞান ফেরানাে । আমরা তর্ক দিয়ে যুক্তি দিয়ে তা পারব না । এরা দিব্যজ্ঞানের নেশায় বুঁদ হয়ে আছে । এদের কান্ডজ্ঞান ফেরানাের একমাত্র উপায় হল এদেরকে মসজিদে ও মুসলিম এলাকায় পাঠিয়ে তাদের মহামূল্যবান জ্ঞানের মনিমুক্তো ছড়াতে বলা । আর কিছু করতে হবে না । শিবপ্রসাদ রায়ের বই আর স্বামী বিজয়ানন্দের ভাষণের থেকেও দশগুণ বেশী টোটকার কাজ করবে এটা । ওদের কান্ডজ্ঞান ফিরে আসবে গ্যারান্টি ।
http://www.facebook.com/suparhumanTAPANGHOSH/
এতসব কথা আমার মনে এল ২০১১ সালের নভেম্বর মাসে বকরিদের আগের দিন । গভীর দুশ্চিন্তায় রাতটা বিনিদ্র কাটল । কারণটা বলা দরকার ।
১৯৮২ সালের ২০ আগষ্ট কলকাতা হাইকোর্টের মামলায় বিচারপতি এ.কে. সেন এবং বিচারপতি বি.সি. চক্রবর্তী রায় দিয়েছিলেন , বকরিদে কুরবানীর জন্য গগাহত্যা করা নিষেধ । এই রায়ের বিরুদ্ধে পশ্চিমবঙ্গের বাম সরকার ১৯৮৩ সালেই সুপ্রীম কোর্টে আপীল করে । আপীল নং ৬৭৯০/৮৩ । দীর্ঘ ১২ বছর মামলা চলার পর ১৬.১১.৯৪ তারিখে প্রদত্ত রায়ে সুপ্রীম কোর্টের ৩ জন বিচারপতির বেঞ্চ কলকাতা হাইকোর্টের রায়কে বহাল রাখেন এবং কুরবানীর জন্য গােহত্যা নিষিদ্ধ করেন । বাংলার প্রতিটি মানুষ জানে যে এই রায় পালিত হয় না । গরু কাটা অবাধে চলতে থাকে। তাই ২০১০ সালে আবার কলকাতা হাইকোর্টে আবেদন করা হয় করিদে গােহত্যা বন্ধ করার জন্য । ১৩৭৮/১০ নং রিট পিটিশনের এই আবেদনের বিচারে ১২.১১.১০ তারিখে হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি রাজ্য সরকারকে আবার আদেশ দেন । গােহত্যা বন্ধের জন্য । তারপরও কয়েক লক্ষ গরু কাটা হয় । অল্প কিছু হিন্দু কোর্টের আদেশ পালন করার জন্য গােহত্যায় বাধা দেওয়া নয় , শুধু রাস্তায় নেমে সামান্য প্রতিবাদ করতে যায় , মুসলমানরা তাদেরকে অস্ত্র দিয়ে আক্রমণ করে ( হাওড়া সাঁকরাইলের ঘটনা ) , এবং পুলিশ প্রতিবাদী হিন্দুদেরকে মেরে ঘরে ঢুকিয়ে দেয় । হাইকোর্ট থাকে গঙ্গার ধারে , আর পুলিশ সর্বত্র নিরাপদে নির্বিঘ্নে গরুকাটাকেই Protection দেয় । হাইকোর্টের প্রাণ থাকলে , মান অপমান বােধ থাকলে ঐ চূড়াওয়ালা বাড়িটা মা গঙ্গায় প্রবেশ করত । এই পরিস্থিতিতে এবছর ২০১১ সালে আবার একাধিক মামলা করা হয় হাইকোর্টে , যদিও তার কোন প্রয়ােজনই ছিল না , কারণ ২০১০ সালের রায়েই হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি বলে দিয়েছিলেন যে বকরিদে কুরবানীর জন্য গােহত্যা বন্ধে এই হাইকোর্ট ও সুপ্রীম কোর্টের রায় আগে থেকেই আছে । তা সত্ত্বেও অবাধে গােহত্যা চলায় তা বন্ধের আবেদনের একটি মামলার রায়ে গত ১৯.১০.১১ তারিখে বিচারপতি হরিশ ট্যান্ডন ও বিচারপতি সৌমেন সেন বকরিদে গােহত্যা নিষেধ করেন । আর একটি মামলায় যার রিট পিটিশন নং ১৬৭ ৪৯/১১ , স্বয়ং প্রধান বিচারপতি মিঃ জে , এন , প্যাটেল এবং বিচারপতি অসীম কুমার রায় আরও কড়া আদেশ দিয়েছেন গত ২.১১.১১ তারিখে । মহামান্য বিচারপতিদ্বয় এই আদেশে রাজ্য সরকারকে মুখ্য সচিবের ( চিফ সেক্রেটারি ) মাধ্যমে নির্দেশ দিয়েছেন যে করিলে গরু কাটা তাে বন্ধ করতেই হবে , এমনকি যে সমস্ত অস্থায়ী গােহাট বসেছে , সেগুলােও বন্ধ করতে হবে , এবং কুরবানীর জন্য গরুর চলাচলও বন্ধ করতে হবে । আর কোন আদেশ দিতে বাকী থাকল কি ? কিন্তু সবাই জানে লক্ষ লক্ষ গরু পশ্চিমবঙ্গে কাটার জন্য আনা হয়েছে । গরুর বাজার কয়েক হাজার বসেছে । পাড়ায় পাড়ায় গরু বেঁধে রাখা আছে । ৭ নভেম্বর সকাল থেকেই প্রকাশ্য রাস্তায় গরু কাটা শুরু হয়েছে । গলার নলিকাটা গরু রাস্তায় পড়ে ছটফট করছে । রক্তে ভেসে যাচ্ছে রাস্তা । পার্কসার্কাস , মেটিয়াবুরুজেহিন্দুরা বাড়ির ছােটদেরকে দূরে আত্মীয় বাড়ি পাঠিয়ে দিয়ে বড়রা দরজা জানালা বন্ধ করে বসে আছে । ভাবছে আর ক’বছর এখানে থাকা যাবে ? বােধ হয় ২-৩ বছরও থাকা যাবে না ।
এইরকম এক পরিস্থিতিতে কোর্টের আদেশ ও আইনের পালন করার জন্য পুলিশ প্রশাসন কী করছে ? তাদেরও মেধা ও বুদ্ধির অভাব নেই । ইদের আগে থেকেই ১০৭ ধারায় প্রতিবাদী ও সম্ভাব্য প্রতিবাদী হিন্দুদেরকে গ্রেপ্তার করা শুরু করে দিয়েছে । উদ্দেশ্য – এই ত্যাঁদড় হিন্দুগুলােকে থানার লক আপে পুরে বাকী হিন্দুদেরকে ভয় দেখিয়ে ঘরে আবদ্ধ রাখা , যেন কেউ জবাই – এর জায়গায় না যায় , প্রতিবাদ না করে , আর থানায় ডায়েরী বা FIR. করতে না আসে । থানায় লিখিত অভিযােগ জমা না পড়লে সহজেই কোর্টকে পরে বলে দেওয়া যাবে যে , গরু কাটা হয়নি । এমনই নির্লজ্জ দুকান কাটা প্রশাসন ও তাদের পরিচালক সরকার । সুতরাং , সরকার তার কর্তব্য পালন করল না । কিন্তু এটা তাে গােপন কথা নয় । জনসাধারণ কি এটা জানে না ? জানে । কিন্তু এনিয়ে তারা চিন্তিত নয় । তারা চিন্তিত শচীন-সৌরভের ভবিষ্যৎ নিয়ে । জনসাধারণ দেখেছে , কোর্টের আদেশ মেনে কালীপূজায় শব্দবাজি বন্ধ করতে পুলিশের তৎপরতা । জনসাধারণ দেখছে দুর্গাপূজা কালীপূজা এবং সমস্ত পূজার বিসর্জন তাড়াতাড়ি করিয়ে দেওয়ার জন্য পুলিশের প্রচেষ্টা । অথচ সমস্ত মসজিদের বেআইনী মাইক বন্ধ করতে , রােজার মাসে প্রত্যেক শুক্রবার সমস্ত জায়গায় রাস্তা বন্ধ করে নামাজ পড়া আটকাতে , বেআইনী গরু কাটা বন্ধ করতে , সবেবরাতের দিন শব্দবাজি বন্ধ করতে – পুলিশের এতটুকু তৎপরতা তাে নেই-ই , বরং এই বেআইনী কাজগুলাে যাতে মুসলমানরা সুষ্ঠুভাবে করতে পারে , এই সমস্ত বেআইনী কাজে যেন কোনরকম বাধা সৃষ্টি না হয় , তা নিশ্চিত করতে পুলিশ ও প্রশাসন ( BDO , SDO , DM ) তৎপর । প্রশাসনের আচরণের এই দু’রকমের নীতি কি শিক্ষিত সচেতন মানুষদের চোখে পড়ে না ? শিল্পী সাহিত্যিক সাংবাদিক বুদ্ধিজীবীদের চোখে পড়ে না ? শীর্ষেন্দু , শক্তি , সুনীল , অপর্ণা , সৌমিত্র , অমর্ত্য , সুজাতদের চোখে পড়ে না ? এই দ্বৈত আচরণ সম্বন্ধে তারা একটাও কথা বলেন না কেন ? একটা গল্প কবিতা নাটকও লেখেন না কেন ? এটাও কি ভােটলােভী রাজনৈতিক নেতাদেরই দোষ ? এই দ্বৈত আচরণের পিছনে কারণটা কী , মানসিকতা কী এবং এর পরিণাম কত ভয়ংকর হতে পারে , সে সম্বন্ধে কি কেউ একটু ভাববেন না ? সব দোষ কি সত্যিই রাজনৈতিক দলগুলাের ? তারা না হয় মুসলমান ভােটের জন্য ওদের সব অন্যায়কে প্রশ্রয় দেয় । কিন্তু শক্তি , সুনীল , সঞ্জীব , শংকর- এরা তাে ভােটেও দাঁড়ান না , দলও করেন না , তাহলে এরা এই দু-মুখাে আচরণের প্রতিবাদ করেন না কেন ?
শুধু শিল্পী সাহিত্যিক বুদ্ধিজীবীরাই নন , সাধারণ মানুষেরও একইরকম আচরণ । গত বছর দেগঙ্গায় অতবড় ঘটনা হল । কোন খবরের কাগজে বের হল না । কিন্তু দেগঙ্গার সাধারণ মানুষেরা কি মুখে মুখে , ফোন করে তাদের আত্মীয় স্বজন , বন্ধুদেরকে ওই ঘটনার কথা জানিয়েছেন । তাদের এম.পি হাজী নুরুল ইসলামের জঘন্য সাম্প্রদায়িক আচরণের কথা বলেছেন ? বলেন নি । সুতরাং , প্রশাসনের এই দ্বৈত আচরণের পিছনে শুধু ভােটলােভী রাজনৈতিক দল ও নেতারাই দায়ী নয় । এর পিছনে এক সার্বিক মানসিকতা কাজ করছে । সেই মানসিকতার শিকার সবাই – দল , নেতা , শিল্পী , সাহিত্যিক , বুদ্ধিজীবী ও সাধারণ মানুষ সবাই । মানসিকতাটা হল এই — মুসলমানরা দেশের আইন মানবে না , নিয়ম নীতি মানবে না । তার উপর তারা হিংস্র এবং একজোট । জোর করে তাদেরকে দিয়ে আইন মানাতে গেলে তারা অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে একজোট হয়ে এমনভাবে ঝাঁপিয়ে পড়বে যে সামলানাে যাবে না , বিরাট সমস্যার সৃষ্টি হবে , সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লেগে যাবে । সুতরাং ওদের উপর জোর খাটিয়াে না । তার থেকে হিন্দুরা তাে শান্ত । ওদেরকে চুপ করিয়ে রাখ । ওদের জায়গা দখল করে নেয় , ওদের মন্দির অপবিত্র করে , মূর্তির গলা কেটে নিয়ে যায় , ওদের মেয়েদের হাত ধরেটানে , ওদের বিসর্জন বা ধর্মীয় শােভাযাত্রায় আক্রমণ করে , ঠাকুর ভেঙ্গে দেয় , মেয়েদের রেপ করে মুসলমানরা যাই করুক না কেন হিন্দুদেরকে চুপ করিয়ে রাখ , ওটা সহজ । ওটাই শান্তি বজায় রাখার সহজ উপায় । এই সহজ উপায়টা রাজনৈতিক দল ও প্রশাসনই শুধু নয় , সাধারণ মানুষ ও বুদ্ধিজীবীরাও মেনে নিয়েছে ।
এই হল মানসিকতা । কিন্তু এর পরিণামটা কী ? ওই সম্প্রদায় আধুনিকতাকে গ্রহণ করবে না , পরিবার পরিকল্পনা মানবে না । জন্ম নিয়ন্ত্রণ করবে না । তাদের সংখ্যা ও অনুপাত বেড়েই যাবে । সেই ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা দেশেরআইন , হাইকোর্ট সুপ্রীম কোর্টের আদেশ কিছুতেই মানবে না । আর তাদের এই না মানাটা অন্যরা মেনে নেবে , এটা গত ৬৪ বছরে তারা বুঝে গেছে । সুতরাং , এই প্রবণতাটাও তাদের বেড়েই চলেছে । এই বর্ধিত জনসংখ্যা ও আইন না মানার বর্ধিত প্রবণতা পশ্চিমবঙ্গের মত রাজ্যে কি একটা খুব বড় রকমের সংকট সৃষ্টি করবে না ? এই বঙ্গ যে কারণে বিভাজন হয়েছিল , আমার নিজের ভিটেমাটি শ দেশে পরিণত হয়ে গিয়েছিল , সেই কারণটাই কি আবার তৈরী হচ্ছে না ? ১৯৪৭ সালে হয়েছিল , আবার সেই পরিণামের দিকেই আমরা কি খুব দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছি না ? অর্থাৎ আবার একবার বাংলাভাগ , এবং তা ইসলামীকরণের দ্বারা ভাগ – সেইদিকেই কি যাচ্ছি না ? তার মানে কি বাঙালী হিন্দু আর একবার রিফিউজী হওয়ার জন্য মনে মনে তৈরী হয়ে গেছে ?
সংকলন শুভঙ্কর নাগ
সংগৃহীত স্বদেশ সংহতি সংবাদ নভেম্বর ডিসেম্বর ২০১১
