লেখক পথপ্রদর্শক মাননীয় তপন ঘোষ
এই প্রথম কোন জঙ্গী বিস্ফোরণে হিন্দুদের হাত আছে — এরকম অভিযােগ উঠল । গত ২৯ সেপ্টেম্বর মহারাষ্ট্রের মালেগাঁও বিস্ফোরণে ৬ জনের প্রাণহানি হয়েছিল । এই বিস্ফোরণের অভিযােগেই সাধ্বী প্রজ্ঞা , কর্ণেল পুরােহিত এবং “ অভিনব ভারত ” নামে একটি অখ্যাত সংগঠনের আরও কয়েকজন হিন্দু সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে । সকলের কাছেই এটা একটা চমকের মত । হিন্দুরাও জঙ্গী হয় , সন্ত্রাসবাদী হয় ! কারাে যেন সহজে বিশ্বাসই হয় না । কিন্তু তদন্ত চলতে থাকল । নতুন নতুন তথ্য মিডিয়ার মাধ্যমে প্রকাশ করা হল । প্রমাণ কিছুই পাওয়া গেল না । তাতে কী হয়েছে ? ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীরা উল্লসিত । দেখেছ , হিন্দুও সন্ত্রাসবাদী হয় । শুধু মুসলমানরাই জঙ্গী হয় না । হিন্দুরাও বােমা ফাটায় , মানুষ মারে । তদন্তকারী দল এ.টি.এস. সেকুলার মিডিয়ার কাছে হিরাে হয়ে গেল । এ.টি.এসের প্রধান হেমন্ত কারকারে দ্বিগুণ নয় , দশগুণ উৎসাহে হিন্দু সন্ত্রাসবাদের শেকড় ও ডালপালা খুঁজতে লেগে গেলেন । একটিমাত্র ক্ষুদ্র বিস্ফোরণ , যাতে কেবল ছয়জনের প্রাণহানি হয়েছে , তার তদন্তে এই মাত্রাছাড়া উৎসাহ মুম্বাই জঙ্গী হামলার পটভূমি তৈরী করে দিল । বস্তা বস্তা গ্রেণেড , ডজন ডজন এ কে ৫৬ রাইফেল , বস্তা বস্তা কার্তুজ , মন মন আর.ডি.এক্স পাকিস্তান থেকে আমদানি হয়ে নিরাপদে জমা হতে লাগল মুম্বাইয়ের তাজ হােটেল , ওবেরয় হােটেল ও নরিম্যান হাউসে । ফিদায়েঁরা এসে ওই হােটেল দুটিতে ঘর ভাড়া নিয়ে অতি নিরাপদে হাসতে খেলতে এলাকা সার্ভে করতে লাগল । ভারতকে নড়িয়ে দেওয়ার মত আক্রমণের সব ব্যবস্থা পাকা করতে লাগল । কোথায় সি.আই.ডি , কোথায় আই,বি , কোথায় সেই জঙ্গী দমনকারী বিখ্যাত এ.টি.এস অ্যান্টি টেররিজম্ স্কোয়াড ? তারা সবাই যে সাধ্বী প্রজ্ঞার পিছনে পড়ে আছে ! তাঁর নাড়ী নক্ষত্র খুঁজে বের করে হিন্দু সন্ত্রাসবাদকে সমূলে উৎপাটন করতে হবে । এই মহান কাৰ্য্যের সময় কি অন্যদিকে মন দেওয়া যায় ? করাচীতে ড্রয়িংরুমে বসে তখন দাউদ ইব্রাহিম ও হামিদ গুল বীয়ারের গ্লাসে চুমুক দিতে দিতে টিভির পর্দায় ভারতীয় চ্যানেলে ঐ স্টোরী দেখতে দেখতে অত্যন্ত তৃপ্তির হাসি হাসছিল । খােদাতালার অসীম করুণায় তাদের পরিকল্পনা নিখুঁতভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে দেখে বেহেস্তের আলাের ছটায় তাদের মুখটা উদ্ভাসিত হয়ে উঠছিল । বেচারা হেমন্ত কারকারে ! হিরােও হলে , শহীদও হলে , সঙ্গে ২০০ জনকে পরপারে পাঠালে । শুধু জানতে পারলে না কোন্ অদৃশ্য হাতের খেলায় তােমাদের এই পরিণতি ।
http://www.facebook.com/suparhumanTAPANGHOSH/
না , সেই অদৃশ্য হাত দাউদ ইব্রাহিম , হামিদ গুল , হাফিজ সঈদ বা আই.এস.আই. নয় । তারা তাে দৃশ্য হাত । তারা যে অদৃশ্য হাতকে ব্যবহার করেছে সেটা কে ? সে বা তারা নিশ্চয় এমন কেউ যে বা যারা আই.বি , সি.আই.ডি. এবং এ.টি.এস. কে আদেশ দেওয়ার অধিকারী । সে কে বা তারা কারা ? দেশের সুরক্ষা ব্যবস্থার কাঠামাে সম্বন্ধে সামান্য জ্ঞান থাকলেই বােঝা যায় যে , এতে তিনটি নাম উঠে আসে । প্রথম নামই হচ্ছে এম.কে.নারায়ণন , জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা । তাঁকে অমান্য করে বা তাঁর আদেশ লঙ্খন করে নিরাপত্তা বিভাগকে কোন আদেশ দেওয়ার ক্ষমতা কোন মুখ্যমন্ত্রীর তাে নেই – ই এমনকি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীরও নেই । তাই এ.টি.এস. কে বিপথচালিত করার দায় বিলাসরাও দেশমুখ অথবা শিবরাজ পাটিলের উপর বর্তায় না । এই দুজনও ষড়যন্ত্রের অংশীদার হতে পারেন । কারণ দাউদ ইব্রাহিমের হাত যে কত লম্বা , তা বােঝা দুস্কর । তবু , এই দুজন ওই ষড়যন্ত্রে নেগলিজেন্স – এর ভূমিকাতে ছিলেন , নিরাপত্তা বিভাগের মনােযােগ ডাইভার্ট – এর ভূমিকাতে ছিলেন না । ওই ভূমিকাতে থাকার মত অবস্থান মাত্র আর দুজনের আছে । তাঁরা হলেন মনমােহন সিং ও সােনিয়া গান্ধী । সুতরাং সেই অদৃশ্য হাতের সন্ধানে মাত্র তিনটি নামই উঠে আসে ঃ এম . কে নারায়ণন , ডঃ মনমােহন সিং ও সােনিয়া গান্ধী । শিবরাজ পাটিল ও বিলাসরাও দেশমুখের পদত্যাগে এই সন্দেহ আরও ঘনীভূত হয় । নাটের গুরুদের আড়াল করতে বরাদের বলি দেওয়া । তাই , ২৬-১১ – র যে ঘটনা গােটা দেশকে নাড়িয়ে দিল , দেশের মান সম্মান ধূলায় ভূলুণ্ঠিত করল , মুম্বাইকে রক্তাক্ত করল , ২০০ জন দেশী ও বিদেশী নাগরিকের প্রাণ নিল , সেই ঘটনার জন্য কৈফিয়ৎ দিতে হবে ওই তিনজনকে , অন্য কাউকে নয় । দেশবাসীর জানার অধিকার আছে যে আমাদের রাষ্ট্রযন্ত্র ভারতের নির্বাচিত সরকারের দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে , না করাচীর কোন প্রাসাদ অথবা ইসলামাবাদের কোন দপ্তর থেকে নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে ।
সংকলন শুভঙ্কর নাগ
সংগৃহীত স্বদেশ সংহতি সংবাদ ডিসেম্বর ২০০৮
