স্বামী বিবেকানন্দ

হে ভারত, এই পরানুবাদ, পরানুকরণ, পরমুখাপেক্ষা, এই দাসসুলভ দুর্বলতা, এই ঘৃণিত জঘন্য নিষ্ঠুরতা — এইমাত্র সম্বলে তুমি উচ্চাধিকার লাভ করিবে…?

এই লজ্জাকর কাপুরুষতাসহায়ে বীরভোগ্যা স্বাধীনতা লাভ করিবে…?

হে ভারত, ভুলিও না — তোমার নারীজাতির আদর্শ সীতা, সাবিত্রী, দময়ন্তী…;

ভুলিও না — তোমার উপাস্য উমানাথ সর্বত্যাগী শঙ্কর ..;

ভুলিও না — তোমার বিবাহ, তোমার ধন, তোমার জীবন ইন্দ্রিয়সুখের — নিজের ব্যক্তিগত সুখের জন্য নহে…;

ভুলিও না তুমি জন্ম হইতেই ‘মায়ের’ জন্য বলিপ্রদত্ত…;

ভুলিও না — তোমার সমাজ সে বিরাট মহামায়ার ছায়ামাত্র …;

ভুলিও না — নীচজাতি, মূর্খ, দরিদ্র, অজ্ঞ, মুচি, মেথর তোমার রক্ত, তোমার ভাই…!

হে বীর, সাহস অবলম্বন কর; সদর্পে বল — আমি ভারতবাসী, ভারতবাসী আমার ভাই…।

বল — মূর্খ ভারতবাসী, দরিদ্র ভারতবাসী, ব্রাহ্মণ ভারতবাসী, চণ্ডাল ভারতবাসী আমার ভাই;

তুমিও কটিমাত্র – বস্ত্রাবৃত হইয়া, সদর্পে ডাকিয়া বল — ভারতবাসী আমার ভাই; ভারতবাসী আমার প্রাণ, ভারতের দেবদেবী আমার ঈশ্বর, ভারতের সমাজ আমার শিশুশয্যা, আমার যৌবনের উপবন, আমার বার্ধক্যের বারাণসী;

বল ভাই — ভারতের মৃত্তিকা আমার স্বর্গ, ভারতের কল্যান আমার কল্যান …;

আর বল দিন-রাত, ‘হে গৌরীনাথ, হে জগদম্বে, আমায় মনুষ্যত্ব দাও ..;

মা, আমার দুর্বলতা কাপুরুষতা দূর কর…, আমায় মানুষ কর…।’

— স্বামী বিবেকানন্দ