রাইকিশোরী চৌধুরী

জল হয়ে যাচ্ছে পানি‚ জল খাবার হচ্ছে নাস্তা। শ্রীযুক্ত-মহাশয়ের জায়গা নিয়ে নিচ্ছে জনাব। প্রার্থনাকে সরিয়ে দিচ্ছে দোয়া। নিমন্ত্রণের বদলে আমরা দাওয়াত দিচ্ছি। নমস্কারের বদলে বাজারে এসেছে সালাম। “সকাল” হয়ে যাচ্ছে “ফজর”, “বৌ” হয়েছে “বিবি”, “জামাইবাবু” হয়েছে “দুলাভাই”, মাংস হয়েছে “গোস্ত”!চোখের সামনে বেড়ে উঠছে গ্রেটার বাংলাদেশ আন্দোলন। বিপজ্জনকভাবে প্রচলন বাড়ছে ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার দাবি । রবীন্দ্রনাথ আর শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী নন। সেই জায়গা নাকি এখন থেকে শেখ মুজিবের!!! রামধনুকে পড়তে হচ্ছে রংধনু‚ আকাশীকে পড়তে হচ্ছে আসমানি। বাচ্চারা ছোটো থেকে শিখছে রাম শব্দটা এসেছে রোমিং থেকে‚ হুসেন শাহ নাকি কৃষ্ণের অবতার! এতদিন ধরে চলে আসা সরস্বতী পুজো বন্ধের দাবি তুলছে কারা? বাঙ্গালী ছেলেমেয়েরা শিখছে আত্মঘৃণা। লজ্জা পাচ্ছে নিজেদের পরিচয় দিতে। চোখের সামনে থেকে বাঙ্গালী জাতিসত্তা স্রেফ দখল হয়ে যাচ্ছে কাশ্মীরি জাতিসত্তার মতো। বাংলায় আজন্ম বড় হওয়া আরবীয় প্রজন্মের কথায় আজও আরবী-উর্দু শব্দ ভরপুর। ইচ্ছাকৃতভাবে বাঙ্গালা ভাষায় আরবি-উর্দু ঢুকিয়ে বাঙ্গালা ভাষাকে বিকৃত করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে একদল। ভাবখানা এমন, যেন বাঙ্গালী সংস্কৃতি ওদের তুলনায় কত্ত নিচু। পারবি তোরা আগামী এক সহস্র বছরে একটা রবি ঠাকুরের জন্ম দিতে? পারবি একটা কৃত্তিবাসী লিখতে? কিংবা একটা “আরণ্যক”‚ একটা “পুতুল নাচের ইতিকথা”‚ একটা “আনন্দমঠ” এর বিকল্প লিখে দেখাতে? তবুও ঘরের ছেলেমেয়েরা নিজেকে প্রগতিশীল দেখাতে অন্ধ পতঙ্গের মত ছুটে চলেছে আরবী-উর্দু মেশানো বিকৃত সংস্কৃতির দিকে। চীনের বাজার দখল করতে একদিন পশ্চিমী শাসকরাও এভাবেই আফিম এনে দিয়েছিল চীনাদের পাতে। কিন্তু চীন ঘুরে দাঁড়িয়েছিল। বাঙ্গালী কবে দাঁড়াবে? আদৌ দাঁড়াবে তো?