তপন কুমার ঘোষ
হিন্দু সংহতির যে ১৫ জন কর্মী ডায়মন্ড হারবার জেলে আমার সঙ্গে আছে , জেলের অবর্ণনীয় কষ্ট সত্ত্বেও তারা উৎসাহ নিয়ে আছে । ১২ ই জুন রাত্রের সেই ঘটনায় আমাদের ২০ জন আহত হয়েছিল যাদের মধ্যে । আট জনের আঘাত গুরুতর ছিল । এর মধ্যে একজন মহিলাও ছিলেন । সেই রাত্রে সন্ধ্যা ৭ টা থেকে রাত্রি ১ টা পর্যন্ত গঙ্গাসাগরে আমাদের শিবির স্থানে যে তান্ডব চলেছিল , স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন সেই তান্ডব দমনে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছিল শুধু তাই নয় , তারাও আহত হয়ে নিজের প্রাণ বাঁচাতে | আমাদের শিবিরের ঘরের মধ্যে লুকিয়েছিল । হিন্দু সংহতির সাহসী যুবকেরা সেদিন ঐ রক্তপিপাসু উন্মত্ত মৌলবাদী জনতার মােকাবিলা না করলে শিবিরে অংশগ্রহণকারী ৮ জন মহিলার শ্লীলতাহানি হত এবং তারপর গঙ্গাসাগরে গােধরা হত । যা হল এবং যা হতে পারত , এই ঘটনাকে অনেকে অনেক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে পারেন । কিন্তু আমি আমার সহকর্মীদেরকে , যারা আমার সঙ্গে জেলের ভিতরে আছেন অথবা জেলের বাইরে , সবাইকে বােঝাতে চাই যে এটা “ মূল্য ”। পশ্চিমবঙ্গে হিন্দুরা মাথা নীচু করে থাকে , অপমান সহ্য করে , অত্যাচারিত হয় , ধর্ষিতা ও গণধর্ষিতা হয় , তবু প্রতিকার চাইতে পারে না , ন্যায় বিচার চাইতে পারে না । শেষ পর্যন্ত এলাকা ছাড়া ( migrate ) হয় । | এসবের প্রতিকারের জন্য শুধু অসহায়ভাবে ভগবানের কাছে প্রার্থনা করে । | কিন্তু ভগবান ঐ অসহায় ও দুর্বলের প্রার্থনা শােনেন না । তাই অত্যাচার বন্ধ হয় না । হিন্দুভিটে ছাড়ে । এলাকা হিন্দুশূন্য হয় । দেশ ছােট হয় । এই অবস্থার প্রতিকার শুধু প্রার্থনায় হবে না । এর জন্য মূল্য দিতে হবে । হিন্দু শান্তি চায় । | কিন্তু তা চায় মূল্য না দিয়ে । কিন্তু জগতে কোনকিছু বিনামূল্যে পাওয়া যায় না । এই শিক্ষাই হিন্দু সংহতি দিতে চায় । তাই ১২ ই জুন গঙ্গাসাগরে আমরা মূল্য দিয়েছি । কারাবাসও সেই মূল্য । এজন্য বিন্দুমাত্র আপশােষ নেই । আরও অনেক রক্ত , অনেক কারাবাস , এবং অনেক বলিদান আমাদেরকে মূল্য হিসাবে দিতে হবে । মূল্য দেওয়ার জন্য হিন্দুজাতিকে প্রস্তুতকরা – এটাই হিন্দুসংহতির লক্ষ্য । এর কোন শর্ট কাট নেই । কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে ধর্মরক্ষার জন্য ধর্মের পক্ষে যাঁরা যুদ্ধ করেছিলেন , | স্বয়ং ভগবান শ্রীকৃষ্ণ তাঁদের পক্ষে ছিলেন । তা সত্ত্বেও তাঁদেরকে কী মূল্য দিতে হয়েছিল কৃষ্ণভক্ত হিন্দুরা যেন একবার ভেবে দেখে। কৃষ্ণের প্রিয়সখা অর্জুনকে পর্যন্ত পুত্রশােক পেতে হয়েছিল । কেন শ্রীকৃষ্ণ অভিমন্যুকে বাঁচিয়ে দিয়ে অর্জুনকে পুত্রশােক থেকে রক্ষা করেননি ? কৃষ্ণ তাে ইচ্ছা করলে সবই পারতেন । কৃষ্ণ অর্জুনকে পুত্রশােক থেকে রক্ষা করেননি কারণ তিনিও জগতের এই নিয়মের ব্যতিক্রম ঘটাতে চাননি যে , জগতে কোন কিছু পেতে হলে তার জন্য মূল্য দিতে হয় । তাই ধর্ম সংস্থাপনও বিনা মূল্যে হয়নি । শুধু অর্জুন-ভীমকেই পুত্রশােক পেতে হয়নি । কুরুক্ষেত্রের মাটি রুধিরসিক্ত হয়েছে , বাতাস ক্ষত্রিয় রমণীর ক্রন্দনে ভারাক্রান্ত হয়েছে , ধর্ম সংস্থাপনের মূল্য দেওয়ার জন্য । আজ বাংলার হিন্দুকে তার সম্মান , নিরাপত্তা , শান্তি ও মা-বােনের সন্ত্রম অর্জন করতে হবে মূল্য দিয়ে । তার জন্য বাংলার হিন্দু প্রস্তুত হােক – এই হল গঙ্গাসাগরের অগ্নিবার্তা ।সংকলন শুভঙ্কর নাগ স্বদেশ সংহতি সংবাদ তপন কুমার ঘােষ ২০.০৬.২০০৮ ডায়মন্ড হারবার কারাগার#suparhumanTAPANGHOSH
