তপন ঘোষ

এবারের লেখাটা একটু এলােমেলাে হবে । কিন্তু কিছু অভিজ্ঞতা কিছু উপলব্ধি কিছু চিন্তাভাবনা সকলের সঙ্গে শেয়ার করা খুবই দরকার বলে মনে করছি । এগুলাে থেকে কোন সিদ্ধান্ত আমি পাঠকের উপর চাপিয়ে দিতে চাইনা । পাঠক নিজেই সিদ্ধান্ত নেবেন । আমাদের হিন্দু সমাজে শত ছিদ্র , আর আমাদের ধর্মে সহস্র ছিদ্র । এই ছিদ্র মেরামতে বা ছিদ্রগুলি সেলাই করতে অনেক সংগঠন , অনেক কর্মী চেষ্টা করছেন , নিঃস্বার্থভাবে কাজ করছেন । কিন্তু তা দিয়ে শেষরক্ষা হবে কিনা বলা কঠিন । অর্থাৎ হিন্দু সমাজ ও হিন্দু ধর্ম বাঁচবে কিনা । যদি বা বাঁচে তা এই হিন্দু দেশে বাঁচবে , নাকি ইউরােপ – আমেরিকায় বাঁচবে ? হিন্দু দেশ ছাড়া হিন্দু সমাজ ও হিন্দুধর্ম আদৌ বাঁচবে কিনা , অথবা বাঁচলেও কতদিন— সেটাও একটা বড় প্রশ্ন । তাহলে তিনটে কথা এসে গেল — হিন্দু দেশ , হিন্দু সমাজ ও হিন্দু ধর্ম । প্রথমে আসি দেশের কথায় । এটা ‘হিন্দু দেশ’ নামে স্বীকৃত না হলেও এখনও একে হিন্দুস্থান বলে । এমনকি ইংরাজি ইন্ডিয়া নামের মধ্যেও হিন্দুশব্দটা ঢুকে আছে। নামে যাই হােক , দেশটা কেমন আছে ? খুব ভালাে নেই , খুব খারাপও নেই । ভারতে এখনও অনেক দুঃখ , দারিদ্র , বঞ্চনা , বৈষম্য , অশিক্ষা , অনাহার , অচিকিৎসা থাকলেও যখন আমরা সারা পৃথিবীর সঙ্গে তুলনা করি তখন দেখি যে বিশ্বের দেশসমূহের তালিকায় আমরা খুব বেশি নীচের দিকে নেই । উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির মাপকাঠিতে ইউরােপ ও উত্তর আমেরিকার দেশগুলাে বাদ দিলে ভারতের স্থান যথেষ্ট সম্মানজনক । দেশের পরিস্থিতি , উন্নয়ন ও প্রগতির হার যদি বিবেচনা করি তাহলে গােটা ভারত খুব খারাপ নেই , প্রগতির হারে এক জায়গায় দাঁড়িয়ে নেই । প্রথমে পরিস্থিতির কথা । পরিস্থিতি বলতে দেশের অখণ্ডতা , সীমান্তের সুরক্ষা , দেশের ভেতরে আইনশৃঙ্খলা , জনগণের নিরাপত্তা , মানবিক ও নাগরিক অধিকার এবং নিজ যােগ্যতা অনুসারে জীবনে উন্নতি করার সুযােগ । এই কয়েকটি মাপকাঠিতে দেখলে দেখবাে যে প্রতিবেশী পাকিস্তান ও চীনের চরম কুমতলব থাকা সত্ত্বেও আমাদের দেশের সীমান্ত সুরক্ষিত এবং জাতীয় অখণ্ডতা বহিঃশত্রুর হাত থেকে মােটামুটি নিরাপদ । দেশের আইনশৃঙ্খলা নিখুঁত না হলেও মােটের উপর নাগরিক নিরাপত্তা আছে । অবশ্য কাশ্মীর , নাগাল্যান্ড , মিজোরাম , কেরল ইত্যাদি কিছু কিছু স্থান এর ব্যতিক্রম । সংখ্যালঘু বা হিন্দু সমাজে জাতিগতভাবে দুর্বল শ্রেণীর উপর কোনরকম অত্যাচার হলে তার বিরুদ্ধে সােচ্চারে প্রতিবাদ করার মতাে সংস্থা ও মিডিয়া এদেশে প্রচুর । আর সেই অত্যাচারের প্রতিকার করার মতাে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা আমাদের দেশের সংবিধান , আইন । ও প্রশাসনে আছে । সুতরাং নাগরিকের নিরাপত্তা , মানবাধিকার ও নাগরিক অধিকার খুব খারাপ অবস্থায় নেই । দ্বিতীয়তঃ উন্নয়ন । সারা দেশের দিকে তাকালে সহজেই বােঝা যায় যে উন্নয়ন হচ্ছে । আমরা থেমে নেই । রাস্তাঘাট , পানীয় জল , বিদ্যুৎ , বাসস্থান , যাতায়াত ব্যবস্থা , স্কুল – কলেজ , মেডিকেল কলেজ , ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ , কৃষি , শিল্প , প্রাণীসম্পদ , খাদ্যবস্তু ও ফলের জোগান , মৃত্যুর হার , শিশুমৃত্যুর হার — যে কোন মাপকাঠি ব্যবহার করে দেখুন , দেশ থেমে নেই । উন্নয়ন হচ্ছে । প্রগতির গ্রফটা উঁচুর দিকেই । যদিও অনেকের কাছেই সেটা যথেষ্ট সন্তোষজনক নাও মনে হতে পারে । তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ মাপকাঠিটি হল যে , যে কোন সাধারণ মানুষ , যে কোন শ্রেণীভুক্ত মানুষ নিজের যােগ্যতা অনুসারে নিজের ও পরিবারের জীবনে উন্নতি করার সুযােগ পাচ্ছে কিনা ? অনেকটা পাচ্ছে । গত হাজার বছরের হিন্দুসমাজে জন্মের ভিত্তিতে উঁচু নীচু বিচার করা জাতিভেদের জন্য যে বৈষম্য ও বঞ্চনা হয়েছিল তার অনেকটাই দূর করা গেছে শিক্ষায় ও চাকরিতে সংরক্ষণের দ্বারা । যদিও এর কুফলকেও অস্বীকার করার উপায় নেই । কিন্তু মােটের উপর আজ দেশের গরীব ও মেধাবী ছাত্র , সামাজিক শ্রেণীবিন্যাসে যেখানেই তার অবস্থান হােক না কেন , উন্নতির সুযােগ পাচ্ছে । যারা লেখাপড়া করে না তারাও শ্রমের ও স্কিলের মূল্য পাচ্ছে । শিক্ষার হার , উন্নতির সুযােগ সবকিছুই উর্ধ্বমুখী । এই হল দেশের পরিস্থিতির কথা । আভ্যন্তরীন দৃষ্টিতেও , আর সারা পৃথিবীর পরিপ্রেক্ষিতেও আমাদের দেশ , অথাৎ এই হিন্দু দেশ খুব খারাপ অবস্থায় নেই । এরজন্য কৃতিত্ব কার প্রাপ্য ? অবশ্যই দেশের জনগণের । কিন্তু তার সঙ্গে এই কৃতিত্ব তাদেরও প্রাপ্য যারা দেশটা চালাচ্ছেন । তারা কারা ? রাজনৈতিক নেতা ও ব্যুরােক্রাট অর্থাৎ প্রশাসক বা আমলারা । এই নেতা ও অফিসারদের আমরা তাে উঠতে বসতে গালাগাল দিই । তাও তাে তারা আমাদের এই হিন্দু দেশকে গােটা বিশ্বের তুলনায় খুব খারাপ অবস্থায় রাখেননি । কিন্তু হিন্দু সমাজ ও হিন্দুধর্মের কী অবস্থা ? আমি তাে সেখানে সমাজে শত ছিদ্র ও ধর্মে সহস্র ছিদ্র দেখতে পাচ্ছি । কী জানি আমি পেসিমিসটিক্ বা হতাশাবাদী কিনা ! প্রথমে আসি হিন্দু সমাজের কথায় । সমাজ কেমন আছে তা বিবেচনা করার আগে সমাজের সাইজ বা আকার বা আয়তনের দিকে একটু লক্ষ্য দেওয়া যাক । এখানে সমাজ বলতে ভারত সহ গােটা পৃথিবীতে ছড়িয়ে থাকা সম্পূর্ণ হিন্দুসমাজের কথা বলছি । এর আকার বা সাইজ কমছে । এককথায় হিন্দুর সংখ্যা বা অনুপাত বা শতাংশ অন্য সমাজের তুলনায় কমছে । তাহলে সমাজ যদি ভালােই থাকে , তারও বা মূল্য কী ? কোনাে পার্সি তাে গরিব নেই । টাটা , রুস্তমজী , সাপুরজী – পালােনজী এরা পার্সি ! বিশাল ধনী ও উন্নত । কিন্তু কোথায় ? নিজ পার্সি দেশে নয় । অন্য দেশে , বিদেশে ( তাদের মূল দেশ ইরান ) । বিদেশেও এই পার্সিদের সংখ্যা কমতে কমতে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়ার মুখে । তাহলে এরকম উন্নতির মূল্য কী , এরকম ভালাে থাকার মানে কী ? আফগানিস্তান একসময়ে গান্ধার ছিল , হিন্দু দেশের অন্তর্গত ছিল । তার কথা ছেড়েই দিলাম । কিন্তু ১৯৩৭ এবং ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত যা আমাদের হিন্দু দেশের অন্তর্ভুক্ত ছিল তার মধ্যে ব্রহ্মদেশ , পাকিস্তান ও বাংলাদেশে হিন্দু সমাজ প্রায় নিঃশেষ । এইসব অংশের প্রায় সমস্ত হিন্দু ভারতে চলে এসেছে । তাহলে তাে হিন্দুর অনুপাত ও শতাংশ অনেকটা বেড়ে যাওয়ার কথা ! কিন্তু বাস্তবে তাে তার উল্টো দেখছি । এখানে হিন্দুর অনুপাত ৮০ শতাংশেরও নিচে চলে গিয়েছে ২০১১ – র জনগণনায় । প্রত্যেক রাজ্যে ও সারা দেশে হিন্দুর অনুপাত কমছে । অর্থাৎ হিন্দুসমাজের সাইজ কমছে । তাহলে হিন্দু সমাজ আছে কেমন ? আর্থিক নিরিখে ভালাে , হিন্দু হিসাবে খারাপ আছে । কলকাতার পার্ক সার্কাসের হিন্দুরা গরীব হয়ে যায়নি , কিন্তু এলাকা ছেড়ে চলে গেছে । গ্রামাঞ্চলেও বহু জায়গাতেও একই অবস্থা । যেখান থেকে চলে যেতে পারেনি , অপমান ও অত্যাচার সহ্য করে সেখানে আছে । মুর্শিদাবাদ জেলার একটি শহরে দরিদ্র হিন্দু পরিবারে সুন্দরী মেয়ে রুম্পা বেহাড়া , পিতা মৃত । মা ছােটখাটো কাজ করেন । একটি অবস্থাপন্ন ছেলের সঙ্গে প্রেমে পড়ে বিবাহ করে আট মাস পর জানতে পারল ছেলেটি মুসলমান এবং তার আগেই একটি স্ত্রী আছে । মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল । বিজেপি – র মাধ্যমে পৌছালাে হিন্দু সংহতির কাছে প্রতিকারের আশায় । হিন্দু সংহতি খুব আগ্রহ সহকারে কেসটা নিল । ঐ পরিবারকে সমস্তরকম সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হল । সেই প্রতিশ্রুতিও যাতে ভরসা করতে পারে তারজন্য কিছু ব্যবস্থাও করা হল । তারপর বলা হল ঐ মুসলিম ছেলেটির নামে থানায় লিখিত অভিযােগ করতে । তারা অনেক চিন্তাভাবনা করলাে , অনেক দোনামােনা করলাে , আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে পরামর্শ করলাে । তারপর আমাদেরকে অনুরােধ করলাে , ছেলেটার সঙ্গে ডিভাের্সের ব্যবস্থা করে দিতে । কিন্তু ঐ মুসলিম ছেলেটির বিরুদ্ধে থানায় অভিযােগ করলে ওরা খুন হয়ে যাবে । ওদের মুর্শিদাবাদে অতি ছােট মাটির ভাঙা বাড়ি । ওদেরকে বললাম , তােমাদের গােটা পরিবারের কলকাতায় থাকার ব্যবস্থা ও কাজের ব্যবস্থা করে দেব । তাই ওই ভয় পেও না । তখন তাদের উত্তর মুর্শিদাবাদের ঐ ছােট্ট শহরে মেয়েটির মামার বাড়ির লােকজনকে মেরে দেবে । সুতরাং থানায় তারা অভিযােগ করতে পারবে না । ফিরে গেল । ঐ ছেলেটির অধীনেই চলে যেতে বাধ্য হল । উড়িষ্যার শিবানী আচার্য্য , মথুরাপুরের নমিতা দাস , মন্দিরবাজারের জবা নস্কর , আরও কত নাম স্মৃতি থেকে হারিয়ে গেছে । মুখগুলাে মনে ভেসে ওঠে । ( হিন্দু সংহতির অফিস ফাইলে সব রাখা আছে ) । ছট্‌ফট্‌ করি । নিজেকে অসহায় মনে হয় । হিন্দুসমাজকে অক্ষম মনে হয় । আর সুখী ও প্রতিষ্ঠিত হিন্দুদের নির্লিপ্ততা দেখে মনে মনে কখনও ক্ষিপ্ত হয়ে উঠি , কখনও হতাশ হয়ে যাই । শুধু এইরকমের ঘটনা নয় , আরও অনেক রকমের ঘটনা । হিন্দু পাড়ায় একজন হিন্দু নিজের বাড়ি মুসলিমকে বিক্রি করে চলে গেল । পাড়ার হিন্দুদের পিছনে বাঁশ হয়ে গেল । আটকানাের কোন উপায় নেই । হিন্দুর শ্মশানের জমি মুসলিমদের দ্বারা দখল হয়ে গেল , হিন্দুর দেবােত্তর সম্পত্তি দখল হয়ে গেল । এক হিন্দু বাংলাদেশ থেকে এসে এক মুসলমানের সঙ্গে সম্পত্তি বিনিময় করলাে । ঐ সম্পত্তিতে একটা কবর ছিল । চল্লিশ বছর পর ঐ মুসলিমের বংশধররা এসে ঐ জায়গাটা দখল করলাে । ব্যারাকপুরে ১ নং ওয়ার্ডে রেললাইনের ধারে সম্পূর্ণ হিন্দু এলাকায় পরিত্যক্ত মসজিদের ধ্বংসাবশেষ আবার ওরা দখল করলাে , পাশের হিন্দু ক্লাব শঙ্খ ভারতী , ভারত সেবাশ্রম সংঘের হিন্দু মিলন মন্দির বিপদে পড়ল । তাদের কিছু করার নেই । গরিব হিন্দুপাড়ায় এসে খ্রীষ্টান মিশনারীরা অবাধে আর্থিক প্রলােভন দিয়ে হিন্দুদের ধর্মান্তরকরণ করছে , অথচ পাশেই গরিব মুসলিম পাড়ায় তাদের ঢােকার ক্ষমতা নেই । আর একদিনের দৃশ্য আমি বােধহয় সারা জীবনে ভুলতে পারবাে না । সুন্দরবনে সন্দেশখালি থানার ধামাখালি ঘাট । প্রচণ্ড গরমের দিন , একটা নৌকার পাটাতনের উপর প্রায় ২০-২২ জন মহিলা বিধ্বস্ত অবস্থায় প্রায় অচৈতন্য হয়ে পড়ে আছে । প্রথমে বুঝতে পারলাম না এরা কারা , এদের এই অবস্থা কেন হয়েছে ? ভাবলাম গরমের দিনে সংক্রামক কলেরা রােগে একসঙ্গে এরা সবাই আক্রান্ত হয়েছে । বােধহয় হাসপাতাল নিয়ে যাচ্ছে । তারপরেই মনে প্রশ্ন এল , কলেরা রােগে শুধু মেয়েরাই কীভাবে আক্রান্ত হলাে , কোন ছেলে নেই কেন ? খোঁজ নিয়ে জানতে পারলাম , এরা কলেরা রুগী নয় । এদের সকলকে সুদূর খুলনা দ্বীপের গ্রামীণ হাসপাতালে অপারেশন করে বন্ধ্যাকরণ করা হয়েছে । সেখান থেকে একটা নদী নৌকায় পার হয়ে সন্দেশখালি দ্বীপে এসে , আরও দশ কিলােমিটার সাইকেল ভ্যানে করে এসে আর একটা নদী পার হয়ে ধামাখালি ঘাটে উঠেছে । এরপর ভ্যানে করে যার যার বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হবে । ঐ হৃদয়বিদারক দৃশ্যে কিন্তু একজনও মুসলিম মহিলা ছিল না । নদীয়া জেলার ধানতলায় সারা রাত্রিব্যাপী বরযাত্রী বােঝাই বাসে হিন্দু নারীদের গণধর্ষণ । আরও কত কত ঘটনা । স্বরদপনগর থানার খাবরা পােতা গ্রামে হিন্দু মন্দিরের চাবি মুসলমানের হাতে চলে যাওয়া , কেসের ভয় দেখিয়ে বাগদী যুবকদের গ্রামছাড়া করে বাম আমলে সম্পূর্ণ অবৈধভাবে দেবােত্তর সম্পত্তির উপর মসজিদ গড়ে তােলা , পাঁচলায় হিন্দু বাজার লুট , শ্যামপুরে সাতটি প্যান্ডেলে কালীমূর্তি ভাঙা , আদিবাসী এলাকায় মুসলিমদের দ্বারা আদিবাসীদের জমি দখল ও আদিবাসী মহিলাদের যৌন শােষণ । ঘটনার শেষ নেই । মনে হয় যেন সম্পূর্ণ হিন্দু সমাজ অরক্ষিত হয়ে পড়ে আছে । শতশত , হাজার হাজার হিন্দু মেয়ের লাভ জেহাদের শিকার হওয়া , হিন্দু ছেলে মুসলিম মেয়ের সঙ্গে প্রেম করে বাধ্য হয়ে মুসলিম হওয়া , লাভ জেহাদের শিকার হিন্দু মেয়েরা ফিরে আসতে চাইলেও নিজের মা – বাবা – ভাইবােনের নিরাপত্তার কথা ভেবে ফিরতে না পারা । এরকম অসংখ্য ঘটনাগুলাে পাথরের মতাে আমার বুকের মধ্যে চাপা আছে । বােধহয় আমার মনটাই পাথর হয়ে যাচ্ছে । দেখে মনে হয় যে হিন্দু সমাজ যেন সম্পূর্ণ অরক্ষিত । একে বাঁচানাের কেউ নেই । এরপর আসি হিন্দু ধর্মের কথায় । আগেই বলেছি , হিন্দু সমাজে শত ছিদ্র হলে হিন্দু ধর্মে যেন সহস্র ছিদ্র । হিন্দুধর্মের নাম করা মঠ ও সম্প্রদায়গুলি দেখে মনে কখনও রাগ হয় , কখনও দয়া হয় , আরও কখনও মনে হয় লাথি মেরে ভেঙে দেওয়া দরকার এগুলােকে । ঢাকায় রামকৃষ্ণ মিশনকে সারা দিনরাত সারাবছর মুসলমানের সেবা করেও নিজের নিরাপত্তার জন্যে মন্দিরের দেওয়ালে বড় বড় করে উর্দু ও আরবী ভাষায় বাণী লিখতে হয় । কিন্তু তারপরেও মিশনের প্রধান সন্ন্যাসী স্বামী সেবানন্দকে ঢাকা ছেড়ে পালিয়ে আসতে হয় । ভারত সেবাশ্রম সংঘ শতবার্ষিকী অনুষ্ঠানে ইমাম বরকতীকে ডাকছে । পুরুষােত্তমম্ অনুকূল ঠাকুরের জন্মস্থান পাবনায় ওনার আশ্রমের সেবায়েতকে কুপিয়ে হত্যা করার পর ভারতে বিভিন্ন হিন্দু সংগঠন প্রতিবাদ মিছিল করলেও ভারতে ঐ পুরুষােত্তমের কয়েক হাজার মন্দির ও কয়েক কোটি শিষ্যের মধ্যে একজনও প্রতিবাদে রাস্তায় নামলাে না দেখে হিন্দুত্ববাদী কর্মীরা ফেস্তুকে ওনাকে ‘ হনুকূল ঠাকুর বলা শুরু করেছে । অন্য অনেক বাবা ও ধর্মগুরুরা আজ জেলে । নামকরা মন্দিরগুলাে ব্যবসাকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে । ধর্মের নামে অনাচারের কোন সীমা পরিসীমা নেই । হিন্দুধর্মের নামে যা খুশি করা যায় । দুর্গাপুজো অনেক জায়গায় বিরিয়ানী উৎসবে পরিণত হয়েছে । তিরুপতি মন্দিরের দেবতা বহু কোম্পানির শেয়ারহােল্ডার হয়ে গিয়েছেন । ছেলেদের হাতে মােবাইলে থ্রিজি কিন্তু মন্দিরে মুচিদেরকে ঢুকতে দিচ্ছে না । দিল্লির চাঁদনীচকে শিব-পার্বতী নৃত্য নামে অশ্লীল ক্যাসেট বিক্রি চলছে । লেখার জায়গা কম তাই ছিদ্র গােনার সংখ্যা বাড়াবাে না । কিন্তু এটা তাে মানতেই হবে যে , ধর্ম চালাচ্ছেন ধর্মীয় প্রধানরা , সমাজ চালাচ্ছেন সমাজনেতারা এবং দেশ চালাচ্ছেন দেশনেতারা । এখন বিবেচনা করে দেখুন আমাদের এই হিন্দু দেশ হিন্দুসমাজ ও হিন্দুধর্ম — কোনটা বেশি খারাপ অবস্থায় আছে ? রাজনীতিকদের আমরা যত গালাগালি দিই না কেন তারা এই হিন্দু দেশটাকে ধরে রেখেছেন ( কাশ্মীর ব্যতিক্রম ) ও এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন । কিন্তু হিন্দুসমাজ ও হিন্দুধর্ম সম্বন্ধে সে কথা জোর দিয়ে বলতে পারছি না । এর দায় সমাজনেতা ও ধর্মীয় নেতাদের নিতেই হবে । আর সমাজের নেতা কে কারা তা চিহ্নিত করতে যদি অসুবিধা হয় তাহলে আমাদেরকেই সে দায়িত্ব নিতে হবে ।সংগৃহীত স্বদেশ সংহতি সংবাদ আগষ্ট ২০১৬#suparhumanTAPANGHOSH