রাজকুমার সরদার, সভাপতি, হিন্দু মিলন সঙ্ঘ
হিন্দু শিশুকে অপহরণ তারপর নৃশংসভাবে খুন হতে হল মনিরুল শেখের হাতে। গত ১১ই সেপ্টেম্বর শুক্রবার ঘটনাটি ঘটেছে দক্ষিণ 24 পরগনা জেলার শ্রীপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের উত্তরপাড়া নামক স্থানে। জানা যায়, ঐদিন বিকালে শ্রীপুর গ্রামে বসবাসকারী এক ধনী ব্যবসায়ীর শিশুপুত্র ষষ্ঠ শ্রেণীতে পাঠরত তুষার চক্রবর্তীকে খেলার মাঠ থেকে অপহরণ করে তারই প্রতিবেশী বছর বাইশের মনিরুল শেখ। স্থানীয় সূত্রে খবর বিশালক্ষী তলার মাঠে খেলায় মেতে ছিলো ঐ শিশু, তারপর থেকেই তাকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। গত 12ই সেপ্টেম্বর শিশুর পরিবারের কাছে পাঁচ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে দুষ্কৃতকারীদের ফোন আসে। 13ই সেপ্টেম্বর শিশুর পরিবারের তরফ থেকে জয়নগর থানায় একটি মিসিং ডায়েরি করা হয়, তড়িঘড়ি সার্চ অপারেশন চালায় জয়নগর থানার পুলিশ। অবশেষে পুলিশের হাতে ধরা পড়ে মনিরুল শেখ ওরফে ভোলা। ধৃতকে দীর্ঘক্ষণ জেরা করলে সে জানায়, শিশু তুষার চক্রবর্তী কে অপহরণ করে পাশের এক বাগান বাড়িতে নিয়ে গিয়ে নৃশংস ভাবে হত্যা করে, এমনকি প্রমাণ লোপাটেরও চেষ্টা করে অভিযুক্ত মনিরুল। ঘটনায় ক্ষোভে ফুঁসছে এলাকাবাসী। অন্যদিকে এই ধরণের জেহাদী কার্যকলাপে ভীত ও সন্ত্রস্ত এলাকার হিন্দুরা। কারণ ইতিপূর্বে একাধিক জেহাদী কার্যকলাপে ও ইসলামিক বর্বরতার সাক্ষী রয়েছে তারা। শাসকদলের হিন্দু নেতার (বিধায়কের) উপর আক্রমণ, জীবন মন্ডলের হাট আক্রমণ, দাসের চকের নিকটস্থ গাববেড়িয়া হাইস্কুলে (একটি সরকারী বিদ্যালয়ে) নামাজ পড়াকে কেন্দ্রকরে ইসলামিক তান্ডবের শিকার হয় হিন্দুরা, ঢোসা অঞ্চলে শিল্পী ইটভাটায় মুসলিম দুষ্কৃতকারীদের তোলাবাজি ও মহিলা কর্মীদের সতীত্ব হরণ, খাকুড়দহহাটে এক সন্ন্যাসীকে গাছের গায়ে বেঁধে পেটানো, হরিনাম সংকীর্তন করা এক কৃষ্ণ ভক্তকে ঘরে কেরোসিন দিয়ে পুড়িয়ে মারার ঘটনা, একাধিক জায়গায় পূজাকে কেন্দ্র করে ঝামেলা, তারানগর রূপনগরে একটি গোটা হিন্দুগ্রামকে জ্বালিয়ে দেওয়া, ঐ একই গ্রামে হিন্দু গৃহবধূকে ছাদের উপরে তুলে নিয়ে গিয়ে গণধর্ষণ করা, এইরকম অগণিত হিন্দু নির্যাতনে খবরের শিরোনামে উঠে এসেছে এই জয়নগর। একদা এই জননী স্বরূপা জয়নগর বহু বীর ও কৃতী সন্তানের জন্ম দিয়েছে, যাদের রক্তে স্বাধীন হয়েছে এই ভারত বর্ষ, যাঁদের কলমের ছোঁয়ায় সমৃদ্ধ লাভ করেছে সাহিত্য জগৎ, যাঁদের সুরের ছোঁয়ায় মুগ্ধ হয়েছে বাংলা তথা ভারত বর্ষের সংগীত জগৎ, আজ এই শ্রেষ্ঠ বীর কৃতি সন্তান প্রসবিনী মাতা যেন ক্রন্দনরত। বীর বিপ্লবী কানাইলাল ভট্টাচার্য,ওখ্যাতনামা কবি সাহিত্যিক শক্তি চট্টোপাধ্যায়, খ্যাতনামা দার্শনিকবিমলকৃষ্ণ মতিলাল, কালীনাথ দত্ত (বাঙালি লেখক), নীলরতন সরকার(বিখ্যাত চিকিৎসক ও শিক্ষাবিদ, যিনি বাংলাদেশের যশোরের জন্মগ্রহণ করলেও অধিকাংশ সময়ে এই জয়নগরে কাটিয়েছেন) হেমন্ত মুখোপাধ্যায় (ভারতীয় সঙ্গীত শিল্পী),নির্মলা মিশ্র (শ্রেষ্ঠ সঙ্গীত শিল্পী), এই মহান সন্তানরা কেউবা জয়নগরের মাটিতে বড় হয়েছিলেন, আবার কেউবা এই মাটিকে নিজের কর্মভূমি হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন। বলতে দ্বিধা নেই যে এই বীর বিপ্লবী ও কৃতি বঙ্গসন্তানের পদধূলি মিশ্রিত এই পবিত্র ভূমি আজ ইসলামী আগ্রাসনের শিকার। আজ এক নিষ্পাপ শিশু অপহরণ ও নৃশংসভাবে হত্যা সমাজে এমনই বার্তা বহন করছে। এই নির্মম নৃশংস হত্যাকাণ্ড এটাই কি প্রমাণ করে না যে হিন্দু আজ বিপদের সম্মুখে? আর যদি কোন হিন্দু এই বর্বরতার বিরুদ্ধে গর্জে ওঠে তাহলে তাকে কারাবরণ করতে হয়। তপন ঘোষের স্নেহধন্য সুপ্রভাত হালদার তারই এক উদাহরণ মাত্র।



কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় আজ সকালে জয়নগরের বহুপরিচিত হিন্দু যোদ্ধা সুপ্রভাত হালদার (নির্যাতিত হিন্দুর পাশে দাঁড়ানোয় যাকে মিথ্যে কেসে ফাঁসানো হয়েছিল) এই নির্যাতিত পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছেন ও তাদেরকে সর্বতোভাবে সহযোগিতা করার আশ্বাস দিয়েছেন। আজ সমগ্র হিন্দুসমাজ বিশেষ করে জয়নগর তথা দক্ষিণ 24 পরগনার হিন্দুরা নিজেরাই সিদ্ধান্ত নিন কি করবেন? একদিন আপনারা রিফিউজি হবেন না স্বধর্ম ত্যাগ করবেন? না তপন ঘোষের দেখানো পথে দাঁতে দাঁত চেপে মাটি বাঁচানোর লড়াই করবেন? তাই বিলম্ব না করে আসুন, আমরা হিন্দুর স্বার্থে হিন্দুধর্ম রক্ষার্থে বলিদান দিতে প্রস্তুত হই। সেই সঙ্গে আমি প্রশাসনের কাছে অনুরোধ করছি, দোষীদের দ্রুত চার্জশিট প্রদানের মাধ্যমে শাস্তি দিয়ে নির্যাতিত পরিবারকে সুবিচার পাইয়ে দিন। সেই সঙ্গে এই নির্মম হত্যাকান্ডের সঙ্গে যদি আর কোন দুষ্কৃতী জড়িত থাকে তাহলে তাদেরকে দ্রুত গ্রেফতার করা হোক। যদি দোষীরা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না পায় তাহলে সমাজে এইধরনের সমাজ বিরোধী শক্তি মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে যার ফল হবে অতি ভয়ংকর। তাই আমি মনিরুল শেখ ও তার সহযোগীদেরকে (যদি কেউ থাকে) ফাঁসির দাবী জানাচ্ছি। আমি এই অসহায় পরিবারের পাশে আছি, ভবিষ্যতেও থাকব এবং আমার সাধ্যমত সহযোগিতা করার চেষ্টা করব!
