পথপ্রদর্শক মাননীয় তপন ঘোষ

বিজেপি নেতা , ভারতের প্রাক্তন বিদেশ মন্ত্রী , অর্থমন্ত্রী , প্রতিরক্ষা মন্ত্রী যশােবন্ত সিং , জয়াচাঁদ – মানসিং – এর বংশধর , বই লিখলেন , নাম “ জিন্নাঃ ইন্ডিয়া-পার্টিশন-ইন্ডিপেন্ডস ” । ৫৯৩ পাতার এই বইয়ের মূল বক্তব্য হল- “ জিন্না ভারত বিভাগের জন্য দায়ী নয় । জিন্না কাঠমােল্লা ছিল না , সে শুয়াের খেত , নমাজ পড়ত না , লুঙ্গি পরত না , উর্দু জানত না । সুতরাং সে সেকুলার ছিল । ভারত বিভাগের জন্য প্রধান দায়ী নেহেরু ও প্যাটেল , এবং অনেকটা গান্ধী । বইটা ঘটা কবে উদ্বোধন হল।প্যাটেলকে দায়ী করায় বিজেপি ও সংঘপরিবারের লােকেরা খেপে গেল । নেহেরুগান্ধীকে দোষী সাব্যস্ত করায় কংগ্রেস ক্রুদ্ধ । পরপর দুবার লােকসভা নির্বাচনে হেরে গিয়ে বিজেপি – তে চলছিল পরস্পরকে দোষারাপের পালা।পরাজয়ের জন্য অভিযােগের কাঠগড়ায় যারা দাঁড়িয়েছিল , অথাৎ বিজেপি – র বর্তমান নেতৃত্ব আদবানি , রাজনাথ , অরুণ জেটলি , ( মনে রাখতে হবে এরাই নির্বাচন পরিচালনা করেছিলেন , এবং তাঁরা ব্যর্থ হয়েছিলেন ) – এরা পেয়ে গেলেন সুবর্ণ সুযােগ । লাগাতার পরাজয়ের ব্যর্থতা থেকে দৃষ্টি অন্যদিকে ঘুরিয়ে দিতে এক কোপে পাঁঠা কাটা । কোন শাে – কজ পর্যন্ত না করে যশােবন্ত সিংকে দল থেকে একেবারে বহিস্কার । যশােবন্ত ভারতে হলেন বলির পাঁঠা । সঙ্গে সঙ্গে পাকিস্তানে হয়ে গেলেন মহান শহীদ । পাকিস্তানে আওয়াজ উঠল আরে কেয়া বাৎ , কেয়াবাৎ ! পাকিস্তানের জন্মদাতা বাপ জিন্নাকে কাফের হিন্দুরা তাে নরঘাতক রাক্ষস মনে করে । আর দেখ , আমাদের জস্সু ভাইয়া কায়েদ্ – এ – আজম্ কে সম্মান , স্বীকৃতি ও মর্যাদা দিয়েছে । ভারত ভাগের জন্য কায়েদ – এ – আজকে দায়ী করেনি । ভারতে বইটার দাম ৬৫০ টাকা , পাকিস্তানে ১৫০০ টাকা ( পাকিস্তানী ) । ইসলামাবাদ ও করাচীতে হু হু করে পেঙ্গুইনের ( বইটার প্রকাশক ) দোকান থেকেইটা বিক্রি হতে লাগল । পুস্তক ব্যবসায়ীরা বলল , গত ৩০ বছরে কোন বইয়ের এরকম বিক্রি হয়নি।যশােবন্ত সিংকে তারা আমন্ত্রণ করল সম্বর্ধনা ও ‘ বুক সাইনিং সেশন ’ – এরজন্য।

প্রকাশকবলল , কোন রকমে ৫০০ বই বাঁচিয়ে রেখেছে বুক সাইনিং সেশন এর জন্য , যশােবন্ত দোকানে বসে নিজে হাতে স্বাক্ষর করে ক্রেতাদের হাতে তুলে দেবেন । ইসলামাবাদে প্রকাশকের কথায় — মুহূর্তের মধ্যে সব বই বিক্রি হয়ে যাবে । আরও বইয়ের জন্য অর্ডার দেওয়া হয়েছে । পাকিস্তানে জসু ভাইয়ার উদ্দেশ্য কাওয়ালি গান লেখা হয়ে গেল । বিখ্যাত কাওয়ালি গায়ক বাঁকে মিঁয়ার গলায় পাকিস্তান টিভিতে সেই কাওয়ালির সম্প্রচার হচ্ছে- “ কোই তাে হ্যায় যাে ওঁহা হামারে তরানে গা রহা হ্যায় , হামারে বাদে কো ওঁহা ইয়াদ কিয়া যারহা হ্যায় , নাম হ্যায় উস্কা যশােবন্ত সিং , আউর ফ্যান হ্যায় ওহ্ কায়েদ্ – এ – আজমকা । তাে জস্সু ভাইয়া , আপ তাে অব জরা বাঁকে মিঁয়া কি আকে কাওয়ালি সুন লে , আউর আপনে আপনে নাম কি ২১ গানোঁ ( বন্দুক ) কি সালামি সুন্ লে ” । মনে হচ্ছে এরপর যশােবন্ত পাকিস্তানে ভােটে দাঁড়ালে জারদারি গিলানিরা হেরে ভূত হয়ে যাবে । সকলের মনেই প্রশ্ন উঠবে , হঠাৎ যশােবন্তের এই জিন্না প্রেম কেন ? এটা রক্তধারা নাকি অন্য কোন কারণ বলা কঠিন । কিন্তু , জিন্না সেকুলার ছিল , ইতিহাস পুরুষ ছিল — এ কথা তাে আদবানিও বলেছেন । তিনি পাকিস্তানে গিয়ে কায়েদ- এ – আজম সংগ্রশালা পরিদর্শন করে সেখানে মন্তব্যের খাতায় একথা লিখে দিয়ে এসেছেন । এবং আজও সেবক্তব্য তিনি প্রত্যাহার করেন নি । আর . এস . এসের প্রাক্তন সরকাৰ্যবাহ এচ . ভি . শেষাদ্রিও তাঁর “ ট্র্যাজিক স্টোরি অব পার্টিশান ” বইতে দেশভাগের জন্য জিন্নাকেই একমাত্র দায়ী । করেননি । তিনিও গান্ধী , নেহেরু , প্যাটেল ও বৃটিশকে দায়ী করেছেন । তাহলে সত্যটা কি ? দেশভাগের জন্য জিন্না দায়ী , দায়ী নয় ? গান্ধী নেহেরু , প্যাটেল – এরাই কি দেশভাগের জন্য দায়ী ? নাকি এরা সবাই আংশিক দায়ী ? শুধুই বৃটিশ দায়ী ? জিন্না কি সত্যি সেকুলার ছিল ? গান্ধীর অবহেলা ( ১৯২০ সালে অসহযােগ ও খিলাফতে গান্ধী আধুনিক মনস্ক জিন্নাকে গুরুত্ব না দিয়ে কাঠমােল্লা মৌলানা মহম্মদ আলি ও সৌকত আলিকে গুরুত্ব দিয়েছিলেন ) এবং নেহেরু – প্যাটেলদের ক্ষমতা লিপ্সাই কি আধুনিক প্রগতিশীল জিন্নাকে ইসলামিক মৌলবাদও বিচ্ছিন্নতাবাদের দিকে ঠেলে দিয়েছিল ? এই প্রশ্নগুলি যশােবন্তের ওই বইটিকে উপলক্ষ্য করে নতুন করে উঠে এল । এটা ভাল হল । এজন্য যশােবন্তকে ধন্যবাদ । এখন এই প্রশ্নগুলির উত্তর খোঁজা যাক । বিখ্যাত পাকিস্তানী ঐতিহাসিক আয়েষা জালাল , যিনি বর্তমানে আমেরিকার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ান , তিনি প্রশ্ন তুলেছেন , এতবড় একটা দেশকে মাত্র একটা মানুষ ভেঙে দিল – এটা কি সম্ভব ? সঠিকপ্রশ্ন । এতবড় দেশকে জিন্না একা ভাঙতে পারে না । তাহলে বৃটিশ ভেঙে দিল ! হ্যাঁ , নিশ্চয় বৃটিশ ভেঙে দিল । কিন্তু ভাঙতে পারল কি করে ? এই প্রশ্নের উত্তরের মধ্যেই নিহিত আছে লােকমান্য বালগঙ্গাধর তিলকের অনুগামী , কংগ্রেসী , আধুনিক ব্যারিস্টার জিন্নার ভারতঘাতক জিন্নাতে রূপান্তরের রহস্য । এ কথা ঠিক যে জিন্না কাঠমােল্লা ছিল না । আদবানি যশােবন্তরা জিন্নাকে সেকুলার বললেন । একথা অনেকটাই ঠিক । কিন্তু তার পরের কথাটা , অর্থাৎ ভারত বিভাগের জন্য জিন্নাদায়ী এটা হল অর্ধসত্য । আর অর্ধসত্য হল । মিথ্যার থেকেও ভয়ংকর , ক্ষতিকর ! তাহলে পুরাে সত্যটা কী ? যেহেতু আমার কোন রাজনৈতিক স্বার্থ । নেই , তাই পুরাে সত্যটা আমি পাঠকের সামনে তুলে নয় , ধরছি । সত্য হল এই — জিন্না পাকিস্তান তৈরী করেনি , পাকিস্তান জিন্নাকে তৈরী করেছে । জিন্না ভারত ভাঙেনি।ইসলাম ভারতকে ভেঙেছে । জিন্নার নিজের কথায় , “ যেদিন ভারতে প্রথম ব্যক্তিটি ইসলামে ধর্মান্তরিত হয়েছে , সেদিনই ভারতে পাকিস্তানের বীজ পোঁতা হয়েছে। ” জিন্নার নিজের কথায় ( যখন কংগ্রেস পাকিস্তানের দাবী অস্বীকার করছিল ) একটা চিতাবাঘের ছানাকে বন থেকে তুলে আনা যায় , কিন্তু তার মন থেকে বনকে মুছে ফেলা যায় না । তােমরা ( কংগ্রেস বা হিন্দুরা ) আজ পাকিস্তানের দাবী অস্বীকার করছ , কিন্তু ভারতে প্রতিটি মুসলমানের মনে যে পাকিস্তান আছে , তাকে তােমরা মুছে ফেলতে পারবে না [ সূত্র ঃ – মিনিং অফ পাকিস্তান , লেখক – এফ এ . খান দুরানী ] অর্থাৎ ,ভারতে প্রতিটি মুসলমানের মনে পাকিস্তানের স্বপ্ন ছিল , বাসনা ছিল , কামনা ছিল । সেই স্বপ্ন , বাসনা , কামনা জিন্না তৈরী করেনি । সেগুলাে বীজ আকারে ছিল । তা তৈরী করেছে ইসলাম।প্রতিটি মুসলমানকে ছােটবেলা থেকে দারুল ইসলামের স্বপ্ন দেখিয়েছে।সমগ্র বিশ্বে দারুল ইসলাম ( ইসলামের রাজত্ব , শরীয়তের শাসন ) স্থাপন করাই জীবনের একমাত্র উদ্দেশ্য , পবিত্র কর্তব্য – এটা শিখিয়েছে । ইসলামের এইমূল শিক্ষার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে । ভারতেরইতিহাস । এদেশে মুসলমান নবাব বাদশারা সাড়ে পাঁচশ ( ১১৯২-১৭৫৭ ) বছর রাজত্ব করেছে । তারপর ইংরেজরা এসে ছলে বলে কৌশলে দেশটা দখল করেছে । সুতরাং এটা ওদের ( মুসলমানদের ) পূর্বপুরুষের অর্জিত সম্পত্তি । তাই ওরাই এর ন্যায্য দাবীদার । ‘ পাকিস্তান ’ শব্দটা তাে বেশী পুরনাে নয় । ৩০ – এর দশকের রহমৎ আলি লন্ডনে বসে এই শব্দটা তৈরী করেছিল।সঙ্গে সঙ্গে শব্দটা ভারতের সব মুসলমানের মনে ধরে গেল।কি করে গেল ? পাক্ ই – স্তান ( উর্দু শব্দ ) মানে পবিত্র স্থান । তাহলে কি ভারতটা ওদের কাছে পবিত্র নয় ? যে মাটিতে ওদের পিতৃ-পিতামহের জন্ম , যে মাটির অন্ন জলে ওদের শরীরে রক্ত মাংস তৈরী হয়েছে , যে মাটিতে ওরা ভূমিষ্ঠ হয়েছে – সে মাটি ওদের কাছে প্রিয় নয় , পবিত্র নয় ? তাহলে কি এটা ওদের কাছে অপবিত্র ? তাই একটা আলাদা করে করে পবিত্র স্থান চাই ? হ্যা , এটাই ঠিক । ওরা তাই চায় । তাই তাে ‘পাকিস্তান’শব্দটা পাওয়া মাত্র ওরা হৃদয় দিয়ে গ্রহণ করল । এই যে জন্মস্থানকে শ্রদ্ধা না করা, জন্মভূমির প্রতি আনুগত্য না রাখা – ওদেরকে কে শিখিয়েছে ? জিন্না ? , জিন্না নয় । এ শিক্ষা ওদেরকে দিয়েছে ইসলাম । শুধু ভারতে নয় , গােটা বিশ্বের মুসলমানকে এই শিক্ষা আজও দিয়ে চলেছে ইসলাম । তাই চেচনিয়া ও ও জিনজিয়াং রাশিয়া ও চীনের শাসকদের রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছে । ওখানে তাে জিন্না নেই , তাহলে ? অর্থাৎ , পাকিস্তান তৈরীর জন্য মুসলমানদের মনে উর্বর ক্ষেত্র প্রস্তুত হয়েই ছিল । সেই ক্ষেত্রে গান্ধী নেহেরু সুরেন্দ্রনাথ চিত্তরঞ্জনরা দেশপ্রেম দেশভক্তির চাষ করার অনেক চেষ্টা করেছেন । তাঁদের চেষ্টার আন্তরিকতার ত্রুটি ছিল না । সেই চেষ্টার জন্য অনেক মূল্য তাঁরা দিয়েছেন এবং হিন্দু সমাজকেও দিতে বাধ্য করেছেন । তা সত্ত্বেও ওই ক্ষেত্রে মুসলমানদের মনে দেশপ্রেমের ফসল ফলেনি।তাই স্বাধীনতা আন্দোলনে , কি অহিংস কি সহিংস , বাংলায় ৫৪ শতাংশ জনসংখ্যা হওয়া সত্ত্বেও একজনও মুসলমান শহীদহয়নি।শত শত শহীদ হয়েছে যুক্ত বাংলার সংখ্যালঘু ৪৬ শতাংশ হিন্দুদের মধ্য থেকেই । জিন্না প্রথমে কংগ্রেসে ছিল । আধুনিক প্রগতিশীল ছিল । কিন্তু সে দেখল , গান্ধী নেহেরু প্যাটেল থাকতে কংগ্রেসে সে বড় নেতা হতে পারবে না । আর আধুনিক হয়ে , দেশপ্রেমিক হয়ে , জাতীয়তাবাদী হয়ে মুসলমানদের মধ্যে কল্কে পাওয়া যাবেনা। তার পিছনে মুসলমানরা আসবে না । কারণ , মুসলিম মনে দেশপ্রেম আর জাতীয়তাবাদের চাষ করলে ফসল ফলে না । ওইমনে কো চাষ করলে ফসল ফলে ? তাহলে কোন চাষের জন্য ওই জমিন উর্বর ? জিন্না বুঝতে পারলেন সাম্প্রদায়িকতা ও বিচ্ছিন্নতাবাদের চাষের জন্য ওই জমি সম্পূর্ণ উর্বর । ওই চাষ করলে ফলবে সােনা । সেই সােনার ফসলের জন্য জিন্না প্রলুব্ধ হল । অর্থাৎ জিন্না পাকিস্তান তৈরী জন্য ঊর্বর জমি তৈরী করেনি । পাকিস্তানের জন্য তৈরী হয়ে থাকা জমির ঊৰ্ব্বরতাই এককালে তিলকে অনুগামী জিন্নাকে প্রলুব্ধ করে টেনে নিয়ে গেল ঐ বিচ্ছিন্নতাবাদের চাষের দিকে । ঐ উর্বরজমির লােভ কংগ্রেসী আধুনিক জিন্নাকে পাকিস্তান আন্দোলনের নেতা সাম্প্রদায়িক জিন্নাতে পরিণত হল । সুতরাং জিন্না একা ভারতকে ভাগ করেনি । ইসলাম ভারতকে ভাগ করেছে । ইসলামের অনুগামী ভারতের প্রতিটি মুসলমান ভারতকে ভাগ করেছে । মুসলমানের পয়সা খাওয়া ঐতিহাসিক আর ভােট লােভী রাজনৈতিক নেতারা সত্যটাকে গুলিয়ে দিতে চায় । দুটো তথ্য এরা বলে না । ( ১ ) স্বাধীনতার আগে ১৯৪৬ সালে গােড়ায় অখন্ড ভারতে নির্বাচন হয়েছিল । ইস্যু ছিল একটাই। কংগ্রেসের দাবী অখন্ড ভারত , মুসলিম লীগের দাবী ভারত ভাগ করে পাকিস্তান । সেই নির্বাচনে সারা দেশের ৯২ শতাংশ মুসলমান ভারত ভাগের পক্ষে মুসলিম লীগকে ভােট দিয়েছিল । অর্থাৎ , দেশ ভাগ — জিন্নার একার দাবী ছিল না । দেশের সমস্ত মুসলমানের দাবী ছিল । সুতরাং দেশভাগের জন্য জিন্না একা নয় , সমস্ত মুসলমানরা দায়ী – এটা ঐতিহাসিকসত্য । ( ২ ) ভারতের যে অংশ পাকিস্তান হওয়ার কথা নয় , অর্থাৎ , দিল্লী , বম্বে , মাদ্রাজ , বিহার , উত্তরপ্রদেশ , মধ্যপ্রদেশ , মহারাষ্ট্র , কর্ণাটক , অন্ধ – এ সমস্ত জায়গায় মুসলমানরাও পাকিস্তানের পক্ষে , দেশভাগের পক্ষে ভােট দিয়েছিল ? কেন ? তারা কি পাবে এতে ? তাদের কিস্বার্থ ? তাহলে পাকিস্তানের দাবী , পাকিস্তানের চাহিদা শুধু পাঞ্জাব , সিন্ধ , বাংলার মুসলমানের নয় ! এ চাহিদা ভারতের সকল মুসলমানের । অর্থাৎ ইসলামের । তাই দেশভাগের জন্য শুধু জিন্না , সলিমুল্লা , সুরাবর্দী , মুজিবর রহমানেরা দায়ী নয় ; সুদূর কেরল , মাদ্রাজের অতি সাধারণ মুসলমানও এরজন্য দায়ী । ঐ নির্বাচনের পরেই জিন্না আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে এবং যুক্তিসঙ্গত ভাবে বলেছিল , আমরা গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে প্রমাণ করে দিলাম , পাকিস্তানের দাবি ভারতের কপিতয় মুসলমানের দাবী নয় । এ দাবী সমগ্র ভারতের মুসলমানের দাবী । আমরা আরও প্রমাণ করে দিলাম যে কংগ্রেস ও গান্ধী ভারতের মুসলমানের প্রতিনিধিত্ব করে না ভারতের আপামর মুসলমানের একমাত্র প্রতিনিধি মুসলিম লীগ । জিন্নার এই দুটি দাবীই সঠিক । এই ঐতিহাসিক সত্য যতদিন আমরা স্বীকার না করব , ততদিন ভারতের জাতীয় সংহতি মজবুত ভিত্তির উপরে স্থাপিত হবে না । ততদিন ভারতে অসংখ্য ছােট বড় কাশ্মীর তৈরী হতেই থাকবে । ততদিন ভারতমাতার অঙ্গ থেকে রক্ত ঝরতেই থাকবে । ততদিন আমরা সাম্প্রদায়িকতা ও বিচ্ছিন্নতাবাদের অভিশাপ থেকে মুক্ত হব না । কেরল মাদ্ৰাজ মহারাষ্ট্র বিহার আসাম পশ্চিমবঙ্গের মুসলমানদেরকে জিজ্ঞাসা করতেই হবে — সেদিন কেন তােমরা পাকিস্তানের পক্ষে ভােট দিয়েছিলে ? যদি পাকিস্তান তােমাদের এতই কাম্য ছিল , তাহলে তােমরা পাকিস্তানে চলে গেলে না কেন ? আজ কি তােমরা মনে কর যে সেদিন তােমরা ভুল করেছিলে ? তাহলে তােমাদের মুখে আজও সেকথা শােনা যায় না কেন ? তােমাদের রাজনৈতিক বা ধর্মীয় নেতৃত্ব আজও সে কথা বলে না কেন ? আজও তােমাদের ভারতমাতা বা বন্দেমাতরম্ বলতে দ্বিধা কেন ? আজও কেন খেলায় পাকিস্তান জিতলে । অনেক মুসলিম এলাকায় বাজি ফাটে ? আজও কেন আসাম , কেরল , কাশ্মীর ও অনেক জায়গায় পাকিস্তানের পতাকা ওড়ে । আর যদি ১৯৪৬ সালে পাকিস্তানের পক্ষে ভােট দেওয়ার সিদ্ধান্ত তােমরা এখনও সঠিক বলে মনে কর , তাহলে তােমাদের ভারতে থাকার অধিকার নেই । তােমাদের পাকিস্তানে চলে যাওয়া উচিত । আর যদি তােমরা মনে কর যে সেদিন তােমরা ভুল করেছিলে , তাহলে সেই ভুলের পরিণামে পাকিস্তানে যে লক্ষ লক্ষ হিন্দু নিহত হয়েছে , লক্ষ লক্ষ হিন্দুনারী ধর্ষিতা হয়েছে , কোটি কোটি হিন্দু – শিখ সর্বস্ব খুইয়ে রিফিউজী হয়েছে তাদের কাছে তােমাদের নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়া । উচিত । এবং তােমাদের সমাজে গণভােট করে সেদিনকার ভুল স্বীকার করা উচিত । তা না হলে প্রতিটি ভারতবাসী মনেকরবে যে তােমরা সুযােগ পেলেই আবার ভারতকে ভাঙবে , আবার পাকিস্তান তৈরী করবে । সুতরাং ঐতিহাসিক সত্য হল যে , জিন্না পাকিস্তান তৈরী করেনি । ইসলাম পাকিস্তান তৈরী করেছে। ইসলামের প্রতিনিধি হয়ে ভারত ভাঙার ভূমিকা পালন করেছে সারা ভারতের ৯২ শতাংশ মুসলমান ( যারা পাকিস্তানেরপক্ষে ভােট দিয়েছিল ) , একা জিন্না নয় । জিন্না শুধু সুযােগকে কাজে লাগিয়েছে এবং নেতৃত্ব দিয়েছে । ভারতের মুসলমানের মনে বিচ্ছিন্নতাবাদের যে উর্বর জমি প্রস্তুত হয়ে ছিল , জিন্না তাতে সাম্প্রদায়িকতার চাষ করে পাকিস্তানের ফসল ফলিয়েছে । এটাই হচ্ছে পূর্ণ সত্য । আদবানি যশােবন্তরা যদি জিন্না প্রশস্তি গাইতে গিয়ে অর্ধেক সত্য না বলে পুরাে সত্যটা বলতেন , তাহলে তাঁদের কাছে । দেশ ও জাতি কৃতজ্ঞ থাকত । কিন্তু ভারতের রাজনীতিবিদদের কাছে সত্য বা পূর্ণসত্য আশা করা যায় । তাহলে দেশের এই দুর্দশা হত না । [ পূনর্মুদ্রণ , সেপ্টেম্বর ২০০৯ ] সংগৃহীত স্বদেশ সংহতি সংবাদ ডিসেম্ব্যার ২০১৭#suparhumanTAPANGHOSH