তপন ঘোষ
ভারতবর্ষ দেশটা বড় বড় । বিশাল । আয়তনের দিক থেকে নয় জনসংখ্যায় । গােটা ইউরােপ মহাদেশে ৫০ টি দেশ । তাদের মিলিত জনসংখ্যা ৭৪ কোটি । ভারতের জনসংখ্যা এখন ১৩২ কোটি । আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের জনসংখ্যা ৩২ কোটি । অর্থাৎ সমগ্র ইউরােপ ও আমেরিকার জনসংখ্যা ১০৬ কোটি যা শুধু ভারতের জনসংখ্যার থেকে ২৬ কোটি কম। ভারত শুধু জনসংখ্যায় বড় নয় , বৈচিত্রেও বিশাল । বিশ্বের আর কোন দেশে এতগুলাে ভাষা নেই , এত প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য নেই । এত বিশাল একটা দেশকে সঠিকভাবে পরিচালনা কোন একজন ব্যক্তি বা একটি মাত্র সংস্থা অথবা কিছু মুষ্টিমেয় ব্যক্তি বা গােষ্ঠী করতে পারে না । দেশকে পরিচালনা মানে শুধু সরকার পরিচালনা করার কথা বলছি না । দেশের সবরকম ক্ষেত্র পরিচালনা করার কথা বলছি । দেশের অর্থনীতি , বিদেশনীতি , প্রতিরক্ষা নীতি , ইত্যাদি তাে সরকার পরিচালনা করেই । তা ছাড়াও যদি কৃষিনীতি , শিল্পনীতি , শিক্ষানীতি , স্বাস্থ্যনীতি প্রভৃতিও সরকার ভালভাবে পরিচালনা করতে পারে , তারপরেও সাহিত্য , সংস্কৃতি , সঙ্গীত , শিল্পকলা ইত্যাদি কি সরকারের দ্বারা ভালভাবে পরিচালনা করা সম্ভব ? , না সম্ভব নয় । এছাড়াও পরিবারের মূল্যবােধ , পরিবেশ সচেতনতা , ইত্যাদি বহু জিনিস সরকারের আয়ত্বের বাইরে । তাই ভারতের মত এত বড় দেশের সবকিছুকে সুন্দরভাবে পরিচালনা করার জন্য বহু মানুষ , বহু সংস্থার প্রয়ােজন আছে । ভারতে যুগে যুগে তা হয়েছেও । কিন্তু ভারতের মত দেশে সবথেকে বড় ভূমিকা পালন করেছে ধর্ম । ধর্ম খুব জটিল জিনিস । ধর্ম ব্যবসায়ীরা তাকে আরও জটিল করে দিয়েছেন । কিন্তু এই লেখায় সে আলােচনায় যাব না । আজকের বিষয়বস্তু অন্য । দেশ ও সমাজের কল্যাণের জন্য ধর্মীয় সম্প্রদায় , ধর্মীয় সংগঠন , সামাজিক সংগঠন , সাংস্কৃতিক সংগঠন ও বহু মানুষ ব্যক্তিগতভাবেও কাজ করেন । তাদের পৃষ্ঠভূমি আলাদা , তাদের কর্মক্ষেত্র আলাদা , তাদের কর্মপদ্ধতিও আলাদা । তাদের আরও বহুকিছু আলাদা । তাহলেও তাদের মধ্যে কিছু মিল বা সমানতা আছে কি ? অথবা থাকার দরকার আছে কি ? আমি মনে করি দরকার আছে । সেকথা আলােচনা করার জন্যই আজকের এই লেখা । সেই সমানতা খুঁজব সকলের আচার ও বিচারে । আচার ও বিচার সকলের কখনই এক হবে না । তা সত্ত্বেও একটা জিনিস এক বা সমান থাকা দরকার । আগে আসি পার্থক্যের কথায় । উত্তর ভারতে ঘরের ভিতরেও কোন পুরুষ মানুষকে খালি গায়ে দেখা যাবে না । গায়ে ন্যূনতম একটা গেঞ্জি , ফতুয়া থাকবেই । কিন্তু দক্ষিণ ভারতে , তামিলনাড়ু বা কেরলে বাড়ির ভিতরে তাে বটেই , এমনকি বাড়ির বাইরেও শিক্ষিত ধনী পরিবারের পুরুষ মানুষকেও খালি গায়ে দেখা যাবে । অর্থাৎ আচরণের তফাৎ হল । কেন হল ? অবশ্যই আবহাওয়া বা জলবায়ুর কারণে । একে আমি বলছি আচার । সব জায়গায় এক হবে না । আর বিচার ? তাও এক হবে না । ভারতের জনজীবনে রামায়ণ ও মহাভারতের প্রভাব অতি গভীর । রাম – লক্ষ্মণ – সীতার পারস্পরিক সম্পর্ক আমাদের কাছে আদর্শ । আমাদের বাংলায় তাে রাম ও রামভক্ত হনুমানের প্রভাব হিন্দি অঞ্চলের থেকে অনেক কম । তা সত্ত্বেও কারাে দাদা ও ভাইয়ের মৃত্যুর পর তার স্ত্রীকে বিয়ে করা প্রায় অকল্পনীয় । অথচ হরিয়ানাতে তা বেশ স্বাভাবিক । আবার সুদুর পূর্বে অরুণাচল প্রদেশে বিয়ের পর ছেলেরা স্ত্রীর বাড়িতে গিয়ে থাকে । ওটাই ওখানকার রীতি যা বাংলায় ছেলেদের । চরম অপমানজনক মনে হবে । এই তফাৎ বা পার্থক্যগুলাে শুধু আচারের তফাৎ নয় , এর মধ্যে বিচারও তাে অনেক তফাৎ হয়ে যাচ্ছে । বিচার মানে চিন্তা , চিন্তাপদ্ধতি ও ভালমন্দের নির্ণয় করা । সুতরাং এই বিশাল দেশে আচার ও বিচার — এই দুইয়েরই বহুবিধতা , তফাৎ , পার্থক্য আছে , থাকবে । আবার বহুক্ষেত্রে মানুষের । আচার বা আচরণ শুধু বিচার দ্বারাই নির্ধারিত হয় না । পরম্পরা ও প্রচলিত প্রথা দ্বারাও বহুলাংশে নির্ধারিত হয় । আমি বহু উচ্চশিক্ষিত মানুষ , ডাক্তার , ইঞ্জিনিয়ার , গবেষক , বৈজ্ঞানিককেও দেখেছি প্রচলতি পরম্পরাকে অতি শ্রদ্ধার সঙ্গে পালন করতে । এখন প্রশ্ন হচ্ছে কোনটা করা উচিত , কোনটা । করা উচিত নয় ? পরম্পরা ও পুরাতন প্রথা কতটা পালন করা উচিত , কতটা উচিত নয় ? এ প্রশ্নের উত্তর মােটেই সহজ নয় । এবং এই প্রশ্নের উত্তরে একমতে আসা তাে আরও কঠিন । আমি সে চেষ্টা করব না । আমি শুধু বলব — আচার , বিচারের পরও আর একটা কথা আছে — সংস্কার । সংস্কার শব্দটার । আসল অর্থ ও প্রচলিত অর্থ সম্পূর্ণ আলাদা । সংস্কার শব্দের আসল অর্থ হল ‘ সম্যক কৃতি ‘ । অর্থাৎ সঠিক কাজ । একথা সহজেই বােঝা যায় যে আজ থেকে হাজার বছর আগে যা সঠিক কাজ ছিল আজ তা সঠিক নাও হতে পারে । আজকে তাকে সঠিক করতে হলে কিছু পরিবর্তনের প্রয়ােজন হতে পারে । এই প্রয়ােজনীয় পরিবর্তন করাটার নামই সংস্কার । যখন কারাে পুরানাে বাড়ি সংস্কার করতে হয় তখন এই সংস্কার শব্দটার সঠিক প্রয়ােগ হয় । তা বুঝতেও কারাে অসুবিধা হয় না । কিন্তু দুঃখের কথা , অন্যক্ষেত্রে সংস্কার শব্দটা ঠিক বিপরীত অর্থে ব্যবহার হয় । আগে মানুষ মাঠে , নদীর ধারে পায়খানা করতে যেত । তার পরবর্তী পর্যায়ে খাটা পায়খানা এই ৫-১০ বছর আগে পর্যন্ত ব্যবহৃত হয়েছে । তখন নিয়ম ছিল পায়খানা করে আসলে স্নান করতে হবে , অথবা কোমর পর্যন্ত ভেজাতে হবে অথবা গামছা বা কাপড়টা ধুয়ে দিতে হবে । এখন হয়ে গেছে ঝকঝকে স্যানিটারি পায়খানা । রান্নাঘরের থেকেও বেশি পরিষ্কার । তাও কোথাও কোথাও ওই কাপড় ধােয়ার পুরানাে নিয়ম বজায় রেখেছে । কারণ ? ওটা বাড়ির সংস্কার । কতবড় ভুল কথা ! ওটা আসলে সংস্কার নয় , ওটা সংস্কারের অভাব । অর্থাৎ পরিবর্তনের অভাব । পুরাতন বাড়ি সংস্কারের সময় ভেঙেচুরে প্রয়ােজনীয় পরিবর্তন করবেন । কিন্তু পুরাতন অভ্যাসের ক্ষেত্রে পরিবর্তন করাটাকেই সংস্কার বলছেন । এটা ভুল হচ্ছে না কি ? তাই এই তিনটে নিয়েই ভারতে হবে । বিচার , আচার ও সংস্কার । কিন্তু এইবার আমাকে একটু উল্টোপথে হাঁটতে হবে , আমি যে কথাটা বােঝাতে চাই তার জন্য । সংস্কারকে আমি পুরানাে ও প্রচলিত অর্থেই ব্যবহার করব কারণ এই শব্দটার সঠিক অর্থযুক্ত কোন প্রচলিত বা বােধগম্য শব্দ আমি খুঁজে পাচ্ছি না বলে । অর্থাৎ সংস্কার মানে পুরানাে রীতি অভ্যাস — এটাই ব্যবহার করব । আমার বক্তব্যটা হল , আচার সংস্কারযুক্ত হওয়া দরকার কিন্তু বিচার সংস্কারমুক্ত হওয়া দরকার । আচারেও সংশােধন করতে হবে । সুতরাং পরিবর্তন করতে হবে । করতেই হবে । কিন্তু তাড়াহুড়াে করবেন না । একটু ধীরে , একটু রয়ে সয়ে । একটা সহজ কথা মনে রাখুন , Every old is not gold কিন্তু আবার Every old is not trash also. পুরাতন প্রাচীন হলেই তা সােনার মত মূল্যবান হয় না । আবার পুরাতন বলেই তা জঞ্জালও হয় না । আপনি চিন্তা করলেন , বিচার করলেন , বিশ্লেষণ করলেন । আপনার মনে হল এই প্রথাটা এই অভ্যাসটা এই রীতিটা একেবারে অকেজো হয়ে গেছে , কাল অনুপযােগী হয়ে গেছে । সুতরাং এটাকে এক্ষুণি বাতিল করে নতুন রীতি অভ্যাস চালু করতে হবে । আপনার চিন্তা সঠিক । কিন্তু একটু ধৈর্য্য ধরুন । আরও পাঁচজনের সঙ্গে আলােচনা করুন । বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি থেকে মতামত নিন।উক্ত পরিবর্তনটা সমাজে বা পরিবারে বড়রকমের ঝাঁকুনি দেবে কিনা , সেই ঝাঁকুনি সমাজ সহ্য করতে পারবে কিনা — এ সম্বন্ধে আরও গভীরভাবে তলিয়ে দেখুন । আলােচনা করুন । তারপর সেই পরিবর্তনের নিদান দিন । কিন্তু তার আগে যে বিচার করেছেন , চিন্তা করেছেন — সেখানে কোন সংস্কার রাখবেন না । কোন বন্ধন কোন সীমা রাখবেন না । চিন্তাকে সম্পূর্ণ সংস্কারমুক্ত রাখুন । যতদূর চিন্তা করা যায় , যে কোনভাবে চিন্তা করা যায় করুন । সংকোচ করবেন না , দ্বিধা করবেন না — চিন্তা করুন । যদি আপনার মনে দুশ্চিন্তা আসে , আচ্ছা সূর্যটা নিভে গেলে কী হবে ? পৃথিবীটা সূর্যের অক্ষপথ থেকে ছিটকে গেলে কী হবে ? মমতা ব্যানার্জী ভারতের প্রধানমন্ত্রী হলে কী হবে ? বিজয় মাল্য সন্ন্যাসী হয়ে গেলে কী হবে ? পার্বত্য চট্টগ্রামটা সিকিমের মত ভারতের মধ্যে ঢুকিয়ে নিলে কেমন হয় ? সব রােহিঙ্গাগুলােকে মেরে ফেলা উচিত , না উচিত নয় ? ইউ এন ও ভুক্ত দেশগুলিতে কোরানটাকে নিষিদ্ধ করলে কেমন হয় ? মুসলমানরা সরকারের সাহায্য ছাড়াই ৯০ শতাংশ মাদ্রাসা চালায় , হিন্দুরা চতুম্পাঠী , টোল , বেদ বিদ্যালয় , গুরুকুল চালাতে পারে না কেন ? আচ্ছা , গরুর তাে এঁড়ে আর বকনা ( স্ত্রী ও পুরুষ ) দু’রকমেরই বাচ্চা হয় । বকনাগুলাে তাে গাইগরু হয়ে দুধ দেয় , এঁড়েগুলাে কী হয় ? এখন তাে চাষে বলদ লাগে ! বিশ্ব হিন্দু পরিষদ বাবরি মসজিদ ভাঙার পর কাশী ও মথুরার মসজিদকে টার্গেট না করে ভােটে জিতে সরকার গঠনের জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়ল কেন ? দেওয়ালির বাজি পােড়ানাে নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের একপেশে রায়ের বিরুদ্ধে আইন অমান্য আন্দোলন করা যায় কিনা ? মােদীজীকে তাঁর বিবাহিত পত্নীকে প্রধানমন্ত্রী আবাসে নিয়ে আসার জন্য আবেদন করা যায় কিনা ? দেশে সমস্ত খেলা ও অ্যাথলেটিক্সে এর উন্নতি করতে ক্রিকেট ম্যাচ বন্ধ করে দেওয়া যায় কিনা ? শ্রীনগরে শ্যামাপ্রসাদের একটা ১০০ ফুট উঁচু স্ট্যাচু নির্মাণ মােদীজী কেন করছেন না ? জেহাদী জঙ্গীদের শুয়ােরের চামড়া জড়িয়ে পুড়িয়ে দিলে কেমন হয় ? ডােনাল্ড ট্রাম্প ও সু কি – কে ভারতের অনারারি সিটিজেন মর্যাদা দিলে কেমন হয় ? তিন তালাক বন্ধ না করে তালাকপ্রাপ্ত মহিলাদের অন্য ধর্মে বিবাহ করা বাধ্যতামূলক করা যায় কিনা ? অবসরপ্রাপ্ত সেনাদেরকে কাশ্মীরে বসানাে যায় কিনা ? বৃন্দাবনবাসী হিন্দু বিধবাদের পরিবারকে ফাইন করা যায় কিনা ? ৩৫ বছর উদ্ধ হিন্দু পুরুষরা অবিবাহিত থাকলে তার আয়ের ২৫ শতাংশ কেটে নেওয়া যায় কিনা ? এরকম যে কোন প্রশ্ন বা চিন্তা যদি আপনার মনে আসে , তাহলে সেই চিন্তাকে থামাবেন না । চিন্তা করতে থাকুন । আলােচনা করুন । প্রবন্ধ গল্প , কবিতা লিখুন । যদি দেখেন আরও অনেকে সেটা গ্রহণ করছে , তাহলে উৎসাহ নিয়ে আরও এগিয়ে যান । এইভাবেই একটা সমাজমন বা সামাজিক সহমত ( Social consensus ) তৈরি হয় । তাতেই সমাজ দেশ এগিয়ে চলে । কিন্তু তাড়াহুড়াে নয় । চিন্তা অবাধ । প্রয়ােগ সবাধ । প্রাচীনপন্থীরা , বিভিন্ন প্রতিষ্ঠিত হিন্দু সংগঠন সংস্কারকে প্রচলিত অর্থে খুব বেশি গুরুত্ব দেন । এত বেশি গুরুত্ব দেন যেসর্বক্ষেত্রেই এটাকে লাগিয়ে দেন । ফলে তাঁরা চিন্তাকেও সংস্কারযুক্ত করতে গিয়ে বন্ধনযুক্ত করে দেন । ফলে এইসব সংস্থার সদস্যদের চিন্তা করার ক্ষমতাটাই কমে যায় । খুব কমে যায় । ফলে এই সংস্থাগুলি নিজেরই অজান্তে ডাইনােসরের মত হয়ে যায় এবং বিলুপ্তির পথে এগিয়ে যায় । একটা উদাহরণ দিই । হিন্দু মহাসভাকে না হয় গান্ধীহত্যার পর নেহেরু সুপরিকল্পিত ও নির্মমভাবে ধ্বংস করেছে , কিন্তু আর্যসমাজ আজ মৃতপ্রায় কেন ? ঊনবিংশ শতাব্দী ও বিংশ শতাব্দীর প্রথম ভাগে ইসলামিক ও খ্রীষ্টান আগ্রাসনের মুখে ভারতের হিন্দুরা কি বিপুল পরিমাণে এই আর্য সমাজকে সাহায্য করেছিল ! জনবল ও অর্থবল — দুটোরই প্রাচুর্য ছিল আর্যসমাজে । কোন বড় রকমের বাধা বা আঘাত আসেনি এর উপর । শুধু ১৯২৬ সালে স্বামী শ্ৰদ্ধানন্দকে দিল্লিতে হত্যা করেছিল আবদুল রশিদ । তখন স্বামীজীর বয়স ৭০ বছর এবং তিনি খুবই অসুস্থ । তাহলে তাে পরবর্তী নেতৃত্ব তৈরি হয়ে যাওয়ার কথা । তাহলে সেই বিরাট আর্যসমাজ আজ সমাপ্তপ্রায় কেন ? অথচ তার প্রয়ােজনীয়তা বা প্রাসঙ্গিকতা তাে ফুরায়নি ! বরং স্বামী শ্ৰদ্ধানন্দের মৃত্যুর পর মুসলিম আগ্রাসন আরও তীব্র হয়েছে এবং ২১ বছরের মধ্যে তারা ভারত ভাগ করে ছেড়েছে । অনেকে বলবেন , গান্ধীর সম্মােহন ও বৃটিশ-গান্ধীর গুপ্ত চক্রান্তের ফলে এটা হয়েছে । হতে পারে । কিন্তু তাকে প্রতিরােধ করতে পারল না কেন আর্যসমাজ ? উত্তর ভারতে তাে গান্ধীর থেকে আর্যসমাজের প্রভাব বেশি ছিল । তাও পারল না । কারণ , আমার মতে , বুদ্ধি সংস্কারযুক্ত । আর্য সমাজের নেতা কর্মীদের চিন্তা মুক্ত ছিল না । তাদের স্বাধীনভাবে চিন্তা করার স্বাধীনতা ছিল না । ফলে অভ্যাস তৈরি হয়নি । ফলে স্বাধীন চিন্তার ক্ষমতা তৈরি হয়নি । পরিণাম — ডাইনােসরের মত অবলুপ্তি । পরিস্থিতির পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে আর্যসমাজ তার ভূমিকা ও কর্তব্যে কী পরিবর্তন করা দরকার তা তারা চিন্তা করে উঠতে পারেনি । একইরকমের পরিণতি হয়েছিল আমাদের এই বাংলার ব্রাহ্মসমাজের । অনেক মহান ব্যক্তি এই আন্দোলনের সাথে যুক্ত থাকা সত্ত্বেও আজ তা সম্পূর্ণ বিলুপ্ত হয়ে গেছে । আমি দাবী করি , আমার চিন্তা অনেকটাই স্বাধীন । আমার চিন্তা সঠিক — এ দাবী করি না । কিন্তু স্বাধীন চিন্তা করার অভ্যাস আমার আছে । আমার আচরণ সংস্কারযুক্ত । কিন্তু আমার চিন্তা ভাবনা , বুদ্ধি ও বিদ্যা সংস্কারমুক্ত বলেই আমি মনে করি । আমার প্রাণের প্রিয় সংগঠন , যে সংগঠনে আমার প্রায় সারাটা জীবন কেটেছে ( ১৯৬৫-২০০৭ ) সেই রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের প্রতি আমার নিষ্ঠা ও আনুগত্য অতি গভীর ছিল । কতটা গভীর তা আজকের কার্যকর্তারা বুঝতে পারবেন না । সেইজন্যই সেই সংগঠনের দায়িত্ব ও কার্যভার ছাড়তে আমার এত দেরি হল । কিন্তু ওই গভীর আনুগত্য সত্ত্বেও আমার চিন্তা ও দৃষ্টিকে আমি বন্ধ হতে দিইনি , মুক্ত রেখেছিলাম । তারই পরিণাম আজকের হিন্দু সংহতি । আমাদের বিশাল ভারতবর্ষে যারাই সামাজিক কাজ করতে চান তাদেরকে মুক্ত চিন্তার অধিকারী হতে হবে । তাদের চিন্তা ও বুদ্ধি যেন সংস্কারমুক্ত হয় । আমার সংস্কারমুক্ত ও স্বাধীন চিন্তা থেকে আমাদের হিন্দু ধর্ম ও সমাজের বেশ কিছু পরিবর্তন অত্যন্ত প্রয়ােজনীয় বলে আমি মনে করি । ভবিষ্যতে সে বিষয়ে লেখার ইচ্ছা আছে । সংগৃহীত স্বদেশ সংহতি সংবাদ নভেম্বর ২০১৭
