পথপ্রদর্শক মাননীয় তপন ঘোষ

মধ্য কলকাতার শ্রদ্ধানন্দ পার্ক একটি ঐতিহাসিক পার্ক । অনেক বিখ্যাত নেতৃবৃন্দের সভা এখানে হয়েছে । নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু , দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ – এরাও এখানে রাজনৈতিক সভা করে গিয়েছেন । কিন্তু যাঁর নামে এই পার্ক , সেই স্বামী শ্ৰদ্ধানন্দ যে মহান উদ্দেশ্যে প্রাণ দিয়েছেন , অর্থাৎ হিন্দুসমাজকে রক্ষা করার জন্য – সেই উদ্দেশ্য নিয়ে কোন সভা এই পার্কে সম্ভবতঃ কোনদিন হয়নি । এই পার্কে নেতাজীর মূর্তি আছে , কিন্তু শ্ৰদ্ধানন্দের কোন মূর্তি নেই । এমন কি এটি একটি জনপ্রিয় পার্ক হওয়া সত্ত্বেও এই পার্কের মেন গেটে একটা নামের বাের্ড পর্যন্ত নেই । একজন সাধারণ মানুষ এর কারণ বুঝতে পারবেনা । সে মনে করবে এটা নিশ্চয়ই সরকারী গাফিলতি অথবা ঢিলেমি । কিন্তু একজন সচেতন হিন্দু বুঝতে পারবে এর পেছনে আসল কারণ কী ! এ দেশ ধর্মনিরপেক্ষ । এ রাজ্য ডবল ধর্মনিরপেক্ষ । ধর্মনিরপেক্ষতার অলিখিত শর্ত হল — হিন্দুর খারাপটা বলতে হবে আর মুসলমানদের ভালােটা বলতে হবে । ধর্মনিরপেক্ষতার অনিবার্য শর্ত হল মুসলমানের খারাপটা কোন মতেই বলা যাবে না । স্বামী শ্ৰদ্ধানন্দকে অসুস্থ থাকাকালীন হত্যা করা হয়েছিল । তাই শ্ৰদ্ধানন্দের নাম করতে হলে তার মূর্তি বসাতে হলে হত্যাকারী আব্দুল রশিদের কথা এসে পড়বে , তার এই নৃশংস কাজের কথা এসে পড়বে । রশিদ কোন চোর ডাকাত ছিল না , সে তার ধর্মের অনুপ্রেরণায় শ্ৰদ্ধানন্দকে হত্যা করেছিল । সুতরাং , ইসলাম ধর্মের অসহিষ্ণুতার কথা এসে পড়বে । এই সমস্ত কথা অতি সত্য অতি বাস্তব হলেও এদেশে ধর্মনিরপেক্ষতার অলিখিত অনিবার্য শর্ত অনুযায়ী তা বলা চলবে না। তাই স্বামী শ্ৰদ্ধানন্দের নামও নেওয়া চলবে না। তা তার নামে পার্ক হলেও নয় । এই লেখাটির লেখক এই পার্কের পাড়াতে চল্লিশ বছর কাটিয়েছে । কিন্তু সে কোনদিন স্বামী শ্ৰদ্ধানন্দের কোন ছবি কোন উপলক্ষ্যেই এই পার্কে দেখেনি । গত ১৪ ই ফেব্রুয়ারী শুধু এই লেখক নয় , এই এলাকার সমস্ত মানুষ ঐ পার্কে স্বামী শ্ৰদ্ধানন্দের ছবি দেখল । শুনল “ ধর্মান্ধ আব্দুল রশিদের হাতে নিহত স্বামী শ্ৰদ্ধানন্দ অমর রহে । ” আর এই সব কিছু হল মাত্র এক বছর বয়সের “ হিন্দু সংহতি ” নামক সংগঠনের অনুষ্ঠানে । মুসলমানরা বিদেশ থেকে এসে বিগত এক হাজার বছর ধরে কোটি কোটি হিন্দুকে তরবারির ডগায় ধর্মান্তরিত করেছে । আর স্বামী শ্ৰদ্ধানন্দ বৈদিকশুদ্ধি যজ্ঞের মাধ্যমে দিল্লীর আশেপাশে মাত্র কিছু মুসলমানকে হিন্দু ধর্মে ফিরিয়ে এনেছিলেন । এই ছিল তাঁর অপরাধ।তাই তাঁকে নিহত হতে হল মুসলমানের হাতে । এই ঘটনার পরে কংগ্রেসের অধিবেশনে শ্রী গান্ধী আততায়ী আব্দুল রশিদকে ‘ ভাই রশিদ ’ বলে সম্বােধন করলেন । সুতরাং গান্ধীভক্ত বাঙালীরা , গান্ধীভক্ত কংগ্রেসীরা বুঝে গেল রশিদকে কোন্ চোখে দেখতে হবে , আর স্বামী শ্ৰদ্ধানন্দকে কোন্ চোখে দেখতে হবে।আর বাঙালীরা নাকি গান্ধী বিরােধী ! তাহলে স্বামী শ্ৰদ্ধানন্দের নামে । এত অনীহা কেন ? তাহলে কি একথা বুঝতে হবে যে বাঙালী গান্ধী বিরােধী হলেও বাঙালীর চোখে । নিশ্চয় এই রশিদ মহান ধর্মনিরপেক্ষ । তাই তাে শ্ৰদ্ধানন্দ সম্বন্ধে এই বিস্মৃতি ।সংগৃহীত স্বদেশ সংহতি সংবাদ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ সংকলন শুভঙ্কর নাগ #suparhumanTAPANGHOSH