ক্যাপ্টেন অজিত বড়াকায়িল, ২৪ জুলাই ২০১২
° ভারত ছাড়া বহুভুজ দেবদেবীর বিগ্রহ একমাত্র মেসোআমেরিকাতেই পাওয়া যায়।
ত্রিলোকনাথ নামে একটি হিন্দু দেবতা আছেন, পুরাণ অনুসারে ইনি নাকি ত্রিলোক (স্বর্গ, মর্ত্য, পাতাল) শাসন করেন। অ্যাজটেকরাও একই নামে ত্রিলোকনাথের উপাসনা করত। স্প্যানিশ কনকিস্তাদরের বিকৃত উচ্চারণে তা টলোকনাহুয়াকুয়ে হয়ে যায়। স্কটিশ ইতিহাসবিদ ম্যাক্লেওড লিখেছেন, “আমি অ্যাজটেক ‘’ ধর্মীয় রীতির সাথে হিন্দু উপনয়ন প্রথার সময়ে ‘কর্ণবেধ’ রীতির মধ্যে মিল দেখে যারপরনাই আশ্চর্য হয়ে গিয়েছি।”
গুয়াতেমালা ও ইউকাটান অঞ্চলের মায়ারা ‘কুলতুনলিলনি’ নামে একটি শব্দ ব্যবহার করত, যার সাথে কুণ্ডলিনীর মিল আছে। শুধু তাই নয়, তারা কুলতুনলিলনি নামে একটা ভাস্কর্যও করেছিল পালেঙ্কে শহরে; যার শিবের কুণ্ডলিনী চক্রের আশ্চর্য সাদৃশ্য আছে। এতেই শেষ নয়, পালেঙ্কেতেই একটি কচ্ছপের বিগ্রহ আছে, যার বর্ণনার সাথে বিষ্ণুর বিখ্যাত কূর্ম অবতারের মিল পাওয়া যায়। মায়ান ‘কূর্ম’ বিগ্রহের ভাস্কর্য দেখে বোঝা যায় কোনও হিন্দু ভাস্কর এটা বানিয়েছে, স্থানীয় মায়ারা বানায় নি।
গুয়াতেমালার ‘পিয়েদ্রাস নেগ্রাস’ মন্দিরের ১৩ ম্যুরাল চিত্রের মধ্যে ৩ নং চিত্রে রামায়ণের বর্ণনা দেওয়া আছে। এস.জি. মোর্লীর ‘দ্য এন্সিয়েন্ট মায়া’ গ্রন্থে লেখক লিখেছেন, ‘হলফ করে বলতে পারি, যারা ইলোরার কৈলাসনাথ মন্দিরের ভাস্কর্য করেছিল, তারাই পিয়েদ্রাস নেগ্রাসে এসে ভাস্কর্য করে গেছে। দুই জায়গার ভাস্কর্যের এমন সাদৃশ্য বিস্ময়ের উদ্রেগ করে।’
অ্যাজটেক ও মায়া সিংহাসন দেখতে অবিকল প্রাচীন হিন্দু সিংহাসনের মতই। তারা যে পাগড়ি পড়ত, পালঙ্কে ঘুমাত, তার সাথে হিন্দু রাজাদের পাগড়ি বা পালঙ্কের আশ্চর্য মিল লক্ষ্য করা যায়।
১৯৩০ দশকে যিনি আমেরিকান রাষ্ট্রদূত হিসাবে মেক্সিকোয় বহু বছর কাজ করেছেন, সেই মাইল পয়েনডেক্সটার দুই খণ্ডে ‘আয়ার ইনকা’ গ্রন্থে লিখেছেন, “গ্যারান্টি দিয়েই বলতে পারি যে, মায়া সভ্যতা একটি আদ্যোপান্ত হিন্দু সভ্যতা। এখানে (ইউকাটান) প্রচলিত ভাষায় অসংখ্য সংস্কৃত শব্দ আছে, কিছু বিকৃত উচ্চারণ রূপে। আমি দেখেছি কুয়েচুয়া ও নাহুয়াটল ভাষায় প্রায় ৫০% শব্দই আদতে সংস্কৃত শব্দ। আমি কয়েকজন হিন্দুকে এনে তাদের সাথে কথা বলতে আদেশ করেছিলাম। দেখলাম প্রায় কোনও রকম অসুবিধা ছাড়াই উক্ত হিন্দু ও ইন্ডিয়ানরা এক ঘণ্টা ধরে কথা বলে গেল। অথচ ঐ হিন্দু নিজের মাতৃভাষা (হিন্দি) ও ইংরেজি ছাড়া অন্য কোনও ভাষা জানে না। অনুরূপ ভাবে ইন্ডিয়ানরাও মাতৃভাষা ছাড়া শুধু স্প্যানিশ জানত। ফলে আমি ভেবেছিলাম তাদের মধ্যে বার্তালাপ চালাতে অসুবিধা হবে। কিন্তু তা হল না। আশ্চর্য! আমি পরে দেখেছিলাম মায়া, অ্যাজটেক ও ইনকা স্তোত্রগুলির বাক্যের সাথে বৈদিক স্তোত্রের অদ্ভুত রকম সাদৃশ্য আছে। অবশ্যই এককালে হিন্দুরা এসে এখানে সভ্যতা স্থাপন করে গিয়েছিল।”
চুন দিয়ে পান পাতা চিবানো, তামাক পাতা চিবানো শুধু ভারতে নয়, মেসোআমেরিকাতেও অত্যন্ত সাধারণ দৃশ্য। পেরুতে তামাকের বদলে কোকা চিবানো হয়। অবশ্যই চিকিৎসার উদ্দেশ্যে তারা কোকা চিবায়।
অ্যাজটেক ও মায়া মন্দিরের ভেতরে, বিগ্রহের গায়ে সোনা ও মূল্যবান রত্নপাথর দিয়ে সাজানো হত, যেমনটা ভারতেও হয়।
মায়া দেবতা শিউহটেচুটলি ও শিপে টোটেক আর কিছুই না, ইন্দ্র ও অগ্নির মায়া ‘অবতার’ বলা যায়। মায়ারা মনে করত শিউহটেচুটলি ইন্দ্রদেবের মতই বৃষ্টি ও বজ্রপাতের দেবতা, যিনি পূর্বদিক রক্ষা করেন। অনুরূপ ভাবে মায়ারা মনে করত, শিপে টোটেক হচ্ছেন অগ্নিদেব; যিনি পশ্চিম দিক রক্ষা করেন। মায়ারা নমস্কারম, পুণ্য বচন ও গুরুকুল প্রথার অনুরূপ প্রথা মেনে চলত। তারা আজও যেভাবে পুষ্পাঞ্জলি করে জলাধারের ওপর, তা দেখলে হিন্দুদের পুষ্পাঞ্জলির কথা মনে পড়বে। শুধ পার্থক্য হল, তারা আগে নিজস্ব দেবদেবীকে পুষ্পাঞ্জলি দিত, এখন জেসাস ক্রাইস্ট ও মেরিকে দেয়।
কেরালায় প্রত্নতাত্ত্বিক উৎখননের ফলে এমন কয়েকটা অতিকায় জাহাজ পাওয়া গেছে, যা দেখে বোঝা যায় অনেক দূরে যাওয়ার জন্য জাহাজগুলি ব্যবহার হত। কেননা, জাহাজে মানুষের থাকার জায়গা কম, রসদের জায়গা বেশি থাকত। অনুমান করে নেওয়া যেতে পারে, উক্ত জাহাজগুলি দক্ষিণ আমেরিকায় যাওয়ার জন্যই তৈরি করা হয়েছিল। জাহাজগুলি টিক ও গোলাপকাঠ দিয়ে বানানো হত, যা বহুদিন টিকত। চৈনিক পর্যটক ফা-হিয়েনের বর্ণনায় জাহাজের উল্লেখ মেলে। তার মতে, জাহাজগুলি নাকি এমন একটা জায়গায় যেত, যেখানকার লোকজন নাকি ভারতীয়দের মত দেখতে। অথচ আমরা জানি যে, তখন ইউরোপ বা আফ্রিকায় ভারতীয়দের মত দেখতে কেউ থাকত না। তাহলে ফা-হিয়েন কাদের কথা বলছেন? অনুমান করা কঠিন নয়, তিনি আসলে মেসোআমেরিকানদের কথাই বলেছেন। যাদের চেহারার সাথে উত্তর ভারতীয়দের মিল চমকপ্রদ রকমের বেশি।
]\



বৌদ্ধ জাতক কথায় এমন জাহাজের বর্ণনা পাওয়া গেছে, যা ৭০০ লোক নিয়ে বহুদূর সফরে যেত। জাহাজগুলির আকার হত মাথা ঘুরিয়ে দেবার মত বিশাল। ব্রহ্মাণ্ড পুরাণে বিশ্ব মানচিত্রের বর্ণনা পাওয়া যায়, যা নিখুঁত মাপজোক দিয়ে বানানো। ভাস্কো দা গামা ১৪৯৮ সালে কালিকটে এসে এক অদ্ভুত অভিজ্ঞতার কথা বলেন। তিনি তার দিনলিপিতে লিখেছেন, “জ়ামোরিনের রাজা আমাকে একটা বড় পার্চমেন্টের মানচিত্র এগিয়ে দিয়ে বললেন, তুমি কোথা থেকে এসেছ, সেটা আঙ্গুল দিয়ে দেখাও। আমি অবাক হয়ে গিয়েছিলাম মানচিত্র দেখে। অসম্ভব নিখুঁত সে মানচিত্রে শুধু এশিয়া, আফ্রিকা বা ইউরোপ নয়, আরও তিন মহাদেশের চিত্র অঙ্কিত ছিল। আমি উক্ত তিন মহাদেশ দেখে অবাক হয়েছিলাম।” কোনও সন্দেহ নেই, জ়ামোরিনের মানচিত্রে দুই আমেরিকা ও অস্ট্রেলিয়ার বর্ণনা ছিল।
ইনকা পুরাণে গণেশের মত দেবতা দেখতে পাওয়া যায়, যার বাহনও ইঁদুর। অ্যাজটেক মন্দির দিয়েগো রিভিয়েরা, মেক্সিকো সিটিতে গণেশের হুবহু প্রতিকৃতির নমুনা দেখা যায়, যা দক্ষিণ ভারতীয় শৈলীতে অঙ্কিত। গুয়াতেমালার পালেঙ্কেতে শিব, হনুমানের চিত্র দেখা যায়। মেক্সিকো সিটি ও ভেরা ক্রুজের পিরামিডের ভেতরে গেলে শিবলিঙ্গ এখনও দেখা যায়। ভেরা ক্রুজে বিষ্ণুর মত দেখতে এক অ্যাজটেক দেবতার প্রতিকৃতি দেখা যায়, যার বাহন গাধা ও হাতে সুদর্শন চক্র। গুয়াতেমালার কুইরাগুয়া যাদুঘরে বিষ্ণুর কূর্ম অবতারের বিগ্রহ দেখা যায়। স্প্যানিশে এই বিগ্রহের নাম ‘পিয়েদ্রাস দে টরটুগা’ বা কচ্ছপ পাথর। ইউকাটান ষ্টেট মিউজিয়ামে বামন অবতারের বলি বধের দৃশ্য সংবলিত বিগ্রহ সংরক্ষিত আছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে প্রায় ২০০০ বছরের পুরানো ঐ বিগ্রহ ইউকাটানে এলো কিভাবে?
ইউকাটান ষ্টেট মিউজিয়ামে গেলে আরেকটা বিস্ময়কর বিগ্রহ দেখতে পাওয়া যাবে, যেটা মেক্সিকোর বাইরে কোনও দিন যায় নি, এমনকি বাইরে থেকেও আসে নি। আর সেটা হল সমুদ্র মন্থনের একটি অতিকায় বিগ্রহ। একটি কচ্ছপের মাথায় একটি পর্বত আছে, তার দুইদিকে এক অতিকায় সাপ দুইদিকে যাচ্ছে। সাপকে টানছে দুই রকম চেহারার মানুষ। একদলের মাথায় বিশেষ ধরণের দৈবীয় মুকুট পড়া আছে। অন্যদলের কারুর মাথায় মুকুট দেখা যায় না। মুকুটধারীরা সবাই দেবতা এবং বাকিরা যে দানব সেটা নিঃসংশয়ে বোঝা যায়। এহেন বিগ্রহ দেখে অ্যাজটেকদের মধ্যে হিন্দু প্রভাব নিয়ে কোনোরূপ সন্দেহ থাকতে পারে না।
মেক্সিকো সিটির পূর্ব প্রান্তে গেলে একটি পুরানো শিব মন্দির দেখা যায়, যা দক্ষিণ ভারতীয় দ্রাবিড় শৈলীতে তৈরি। অথচ মন্দিরের বয়স কার্বন ডেটিং টেস্ট করে দেখা গেছে মন্দিরের বয়স প্রায় ১৫০০ বছর। অত পুরানো মন্দির কে বানালো? অ্যাজটেকরা বানায় নি, তা গ্যারান্টি দিয়েই বলা যায়। স্প্যানিশ কনকিস্তাদর বাহিনীর জনৈক সদস্য লিখেছেন, সেখানে শিলালিপিতে যে ধরণের অক্ষর দেখা যায়, তা কেবল ভারতে প্রচলিত। শিব বিগ্রহের গলায় সোনার তৈরি সাপ ছিল, তা বর্বর স্প্যানিশরা কেটে চুরি করে চলে গিয়েছে।
সিঙ্গাপুর বন্দর যিনি নির্মাণ করেছিলেন সেই স্যার থমাস স্ট্যামফোরড বিংলে র্যাফ্লেস তার দিনলিপিতে লিখেছেন, “ইন্দোনেশিয়ার জাভায় স্থিত বোরোবুদুর স্তুপ দেখলে তাকে মধ্য আমেরিকার কোনও মায়া মন্দিরের হুবহু প্রতিকৃতি মনে হবে। প্রাচীন মায়া কাব্যে রামায়ণ ও মহাভারতের প্রভাব খুবই সুস্পষ্ট।”
মায়া মন্দিরগুলির আঙ্গিকে ভারতীয় প্রভাব বিশেষ ভাবে লক্ষণীয়। নিঃসন্দেহে ময় দানব বহু যুগ আগে সেখানে গিয়ে মন্দিরগুলি নিজে বানিয়েছিলেন অথবা তার নির্দেশ মেনে মায়ারা বানিয়েছিল।
সংগৃহীত Ayan Sesselj Chakraborty
